ভাঙা ঘরে সেলুন চালায় বাবা,দরিদ্র বাবার স্বপ্নপূরণ করে ছেলে যা করে দেখালো,স্যালুট নেটিজেনদের!

মেঘনীতলায় রাধুর গ্যারেজের সামনে রাস্তার পাশে ছোট একটা ভাঙ্গাচোরা ভাড়ার ঘরে সেলুনে চুল কাটার কাজ করেন পঞ্চাশ উর্দ্ধ অনিল শীল। ৩ ছেলে-মেয়ে আর স্বামী-স্ত্রী মিলিয়ে ৫ জনের সংসার অনিল শীলের, তিনি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। সংসারে উপার্জনাক্ষম ব্যক্তি একমাত্র তিনি। তাঁর ভাষায়,‘‘ ভাঙ্গাচোরা ছোট ঘরে সেলুন। এখানে যারা চুল-দাড়ি কাটতে আসেন, তারা অধিকাংই গরীব মানুষ। দিন-রাত সমানে পরিশ্রম করে এই সেলুন থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে ৩ ছেলে-মেয়ে-সহ ৫ জনের সংসার চালাতে হয়। ৩ বেলা তো দূরে থাক, দু’বেলাও ঠিকমত খাওয়া হয়না। তবুও ৩ ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ করেননি। দুই ছেলের কাউকেই নিজের পেশায় ডাকেননি। বরং শত কষ্টের মধ্যেও তাদের লেখা-পড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছি..।

বড় ছেলে অপূর্ব শীল (২৬) হিসাব বিজ্ঞানে অনার্স পাশ করেছে। ছোট ছেলে নিপু শীল (১৬) এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং মেয়ে মৃত্তিকা শীল (১৯) কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছে। অর্থাৎ তিন ছেলে-মেয়েই লেখাপড়া করছে। অনেক জায়গায় পরীক্ষা দিয়েও যখন চাকরি হয়নি। তিনি বলেন ভেবেছিলাম আমার মত গরীব মানুষের ছেলের চাকরী হবেনা। কিন্তু দেখলাম ভগবান আছে।” এই হতদরিদ্র অনিল শীলের বড় ছেলে অপূর্ব শীল এর চাকুরী হয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। অপূর্বর ভাষায়,‘ এ খুশী প্রকাশ করা যায় না। সংসার চালাতে, আমাদের ৩ ভাই-বোনকে লেখাপড়া করাতে বাবার খুব কষ্ট হচ্ছিল। অনেক পরীক্ষা দিয়েছি, প্রত্যেক লিখিত পরীক্ষায় টিকেছি, কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার পর কেন যেন বাদ পড়ে গেছি ..। তবে বিশ্বাস ছিল মেধার মূল্যায়ন একদিন হবে। স্যারদের কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার নেই ..। ”

```

অপূর্বও মা রীতা রানী শীল বলেন, জীবনে কখনও ভাবিনি বিনে পয়সায় আমার ছেলের চাকরী হবে।.. আপনার ছেলের চাকরি হয়েছে ডিসি অফিসে- প্রশ্ন করতে তিনি বলেন- হ্যা। কিভাবে চাকরি হল, কে তদবীর করেছিল, কত টাকা লেগেছে … এমন প্রশ্ন করতে তিনি প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলেন, আমি খুব গরিব মানুষ, ঠিকমত খেতে পারি না, টাকা কোথায় পাব, কে আমাদের তদবির করবে, ঠাকুর ভগবান তদবীর করেছে, আমার বিশ্বাস ছিল.. বলেই অনিল শীল কাঁদতে শুরু করেন। সে কান্না যেন থামেই না। সুখের কান্না, আনন্দের কান্না, প্রাপ্তির কান্না যে এত দীর্ঘ হয়, তা আগে কখনও দেখিনি। প্রাপ্তি যখন প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে যায়, তখন বোধকরি এমন হয়।

কোন প্রকার সুপারিশ ও ঘুষ ছাড়া চাকুরী হওয়ায় জেলা প্রশাসনের প্রতি তিনি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জেলা প্রশাসক সোমবার দুপুরে বলেন, শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আমরা অফিস সহায়ক-সহ বিভিন্ন পদে চাকুরী দিয়েছি। চেষ্টা করেছি সবকিছুর উর্দ্ধে থেকে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ নিশ্চিত করার। ভবিষ্যতেও সকল নিয়োগে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও মেধার ভিত্তিতে দেওয়া হবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’এ নিয়োগ বাছাই কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) বলেন, জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনা মত মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে শতভাগ সচ্ছতার সাথে কাজ করেছি। কমিটির সকলেই অত্যন্ত আন্তরিক ছিলেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্তরা যোগদান করবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

```