বাবা দরিদ্র গ্যাস মিস্ত্রি,কষ্ট করে মেয়েকে মানুষ করে, মেয়ে যা করে দেখালেন,স্যালুট নেটিজেনের

বাবা পেশায় গ্যাস মিস্ত্রি। মা গৃহবধূ। কিন্তু, মেধাবী মেয়েটা কখনও জেদ ছাড়েনি পড়াশোনার। ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়েছে নিজের লক্ষ্যে। ছোটবেলা থেকে অভাব দেখে এসেছেন এই মেয়ে। কিন্তু, দারিদ্রের আস্তরণ ছাপিয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে মেধা। স্থানীয় শিশু শিক্ষা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ হয় তাঁর। এরপর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সায়েন্স নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা সরস্বতীর। ছেলেবেলা থেকেই বাবাকে সংগ্রাম করতে দেখেছেন তিনি। পেশায় গ্যাস মিস্ত্রি বাবার নুন আনতে পান্তা ফোরানোর জোগাড়।

কিন্তু, ‘কুঁড়ে ঘরেও’ রাজকুমারীর পড়াশোনায় যাতে কোনও ব্যাখাত না ঘটে সেজন্য দিতেন বিশেষ নজর। খাতা, বই থেকে শুরু করে ভালো ফলাফল করার জন্য মেয়ের যা যা প্রয়োজন হয়েছে নিজের সামর্থ্য দিয়ে পুরোটাই জোগান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।উচ্চমাধ্যমিকের পর রানিগঞ্জের ত্রিবেণীদেবী ভালোটিয়া কলেজে থেকে পড়াশোনা করছিলেন তিনি। কিন্তু, ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তাই কলেজে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু করেছিলেন ডাক্তার হবার জন্য যে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিতে হয় সেই NEET-এর প্রস্তুতিও।

একদিকে সংসারের অভাব অন্যদিকে সর্বভারতীয় পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার চাপ, কিন্তু পথভ্রষ্ট হননি সরস্বতী। ২০২২ সালে নিট পরীক্ষা দেন তিনি এবং সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। সর্বভারতীয় মেডিক্যাল পরীক্ষায় চোখ ধাঁধানো র‍্যাঙ্ক করে দিল্লি AIIMS-এ পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। মেয়ের এই সাফল্যে চোখে জল বাবা-মায়ের।দুর্গাপুরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের দেশবন্ধু নগর কলোনির বাসিন্দা সরস্বতী রজক।

সরস্বতী জানান , এর আগেও নিট দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, সেই সময় র‌্যাঙ্ক ভালো না হওয়ায় রায়পুর মেডিক্যাল কলেজে চান্স পান তিনি। সেখানে ১২ লাখ টাকা চাওয়া হয় তাঁর থেকে। কিন্তু, সেই টাকা দেওয়ার মতো ক্ষমতা তাঁর ছিল না।এরপরেই এই কিশোরী জেদ ধরেন সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনার জন্য ভালো র‌্যাঙ্ক করবেন তিনি, যাতে পরিবারকে কোনও অর্থ দিতে না হয়।”

সরস্বতী জানান, নিজের অধ্যাবসার পাশাপাশি পরিবারকে পাশে পেয়েছি। আমি একসময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু, সেই সময় পাশে এসে দাঁড়ান আমার মা। তিনি বলেন, আমি ঠিক নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। নিজের সেরাটা দিয়েছিলাম। সফল হয়েছি। আপাতত তিনি দিল্লি AIIMS-এ ভর্তি হয়েছে। প্রতিবেশীরাও আজ গর্বিত। সরস্বতীকে দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবেন বলেও মন্তব্য তাঁদের।