মারধর করে তাড়িয়ে দেয় স্বামী,বাড়ি বাড়ি কাজ করে, লড়াই করে মহিলা যা করলেন,স্যালুট

কথায় আছে চেষ্টা করলে মানুষ সবকিছু করতে পারে, কিন্তু বাস্তব জীবনে আমরা দেখি এই সব কিছু করতে পারার একটা লিমিট থাকে। অর্থাৎ আপনি যদি বড় ব্যবসায়ী হতে চান কোথাও আপনার কাছে পুঁজি থাকাটা জরুরী ঠিক সেরকম ভাবেই কেউ যদি পড়াশোনা করে জীবনে বড় কিছু করতে চায় তার সামনেও অন্তত পড়াশোনা করার সুযোগ টুকু থাকা উচিত। তবে এই মহিলা এমন কাজ করে দেখালেন যা আরো একবার প্রমাণ করে দিল যে সত্যিই চেষ্টা করলে মানুষ সবকিছুই করতে পারে।

গুজরাটের এক ছোট্ট জেলায় ১৯৮২ সালে জন্ম হয় কোমল এর। সেই ছোট থেকেই পড়াশোনায় খুব মেধাবী ছিল এবং তার স্বপ্ন ছিল জীবনের একজন সিভিল সার্ভিস অফিসার হওয়া, অর্থাৎ আইপিএস অথবা আইএএস অথবা ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস অফিসার। সেই স্বপ্নকে বুকে নিয়ে সে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যায় এমনকি সে একটা পরীক্ষাতে পাস করে যায় কিন্তু তার কপাল এতটাই খারাপ বাড়ি থেকে তার সেই মুহূর্তেই বিয়ে ঠিক করে দেয় এবং ইন্টারভিউতে না যেতে পারায় সিভিল সার্ভিস অফিসার হওয়া থেকে সে বঞ্চিত হয়। বিয়ের পরেই শুরু হয় শ্বশুর বাড়ির অত্যাচার।

```

কোমলের বিয়ে হয়েছিল বিদেশে বসবাসকারী এক ভারতীয় সাথে যিনি নিউজিল্যান্ডে থাকতেন। বিয়ে হবার ১৫ দিনের পরেই ছেলেটি এবং তার বাড়ির লোকজন কোমলের উপর চরম অত্যাচার করা শুরু করে, অনেক টাকার পন দাবি করে ছেলেটির পরিবার। কোমলকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় এবং বাবার কাছে গিয়ে টাকা নিয়ে আসার দাবি জানাই সেই ছেলে। কোমল বাড়ি এসে তার বাবাকে সব কিছু বলে, আর তার মধ্যেই তার স্বামী ভারত ছেড়ে নিউজিল্যান্ড চলে যায় এবং আর কখনো ফেরেনি। কোমল অনেক চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি। এরকম পরিস্থিতিতে কোমল নিজের বাড়িতেই থাকা শুরু করে কিন্তু আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া পড়শীরা শুরু করে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা যা থেকে অতিষ্ঠ হয়ে কোমলকে তার বাড়ি ছাড়তে হয়।।

সে নিজের বাড়ি ছেড়ে দূরে একটা গ্রামে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় যেখানে ইন্টারনেট তো ছিল না তার সাথে ইংরেজির পেপার পর্যন্ত সেখানে আসতো না। কোমল সিদ্ধান্ত নেয় সেখানে থেকে সে সিভিল সার্ভিস হওয়ার স্বপ্নটা পূরণ করবে। সেই গ্রামের একটা ছোট্ট প্রাইমারি স্কুলে সে পড়ানো শুরু করে এবং সেখান থেকে যে 5000 টাকা সে পেত সেই দিয়ে নিজের থাকা খাওয়ার খরচ কোনরকমে চালাত সে। সেখানে ইন্টারনেট ব্যবস্থা না থাকার জন্য কোমলের প্রস্তুতি সঠিক হয়নি যার ফলে তিন বছর সে এই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। পরপর তিন বছর ফেল করে সে। ফোন থেকে শুক্র সে প্রাইমারি স্কুলে পড়াতো এবং শনি রবি সেখান থেকে অনেক দূরে আমেদাবাদে পৌঁছে সে কোচিং ক্লাসে যেত। কিন্তু এই সামান্য টুকু দিয়ে তো আর ইউপিএসসি ক্লিয়ার করা যায় না, আর সেই পরিভাষাটুকুই বদলে দেয় কোমল।।

```

চতুর্থবারে সারা ভারতে তার র‍্যাঙ্ক হয় 591, শুধু তাই নয়, তৃতীয় বার পরীক্ষা দিয়ে যে ১১ জন সেই বছরে পাস করেছিল তার মধ্যে তৃতীয় রাঙ্ক করে সে। স্বপ্নপূরণ হয় কোমলের, শেষ হয় তার কঠিন লড়াই। ভারতীয় রেভিনিউ সার্ভিস অর্থাৎ IRS অফিসার হয় কোমল। কঠোর পরিশ্রম এবং মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে সে প্রমাণ করে দেয় যে মানুষ চাইলে সবকিছুই করতে পারে পরিস্থিতি যতটাই খারাপ থাকুক না কেন।