ঘুমানোর সময় দ্বীপটি এক দেশের,সকাল হলেই অন্য দেশের! দ্বীপের মানুষদের কষ্ট জানলে অবাক হবেন!

এ রকমটা যদি কখনও হয়, সকালে উঠে দেখলেন, আপনি এক অন্য দেশে রয়েছেন। অথচ, রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় যেখানে ঘুমিয়েছিলেন, সেখানেই ঘুম ভেঙেছে আপনার। অর্থাৎ একটুও নড়াচড়া করেননি। তা-ও অন্য দেশে চলে গেলেন! এমনও হয়? ভাবছেন আজগুবি গপ্পো। কিন্তু না, এমনটা হতেই পারে। এই ব্রহ্মাণ্ডে কত কাণ্ডই না ঘটে!ভাবছেন নিশ্চয়ই, এমন কাণ্ড একমাত্র হয়তো স্বপ্নেই ঘটে থাকে। কিন্তু না, বাস্তবে এমনটা হতেই পারে। পৃথিবীতে এমন একটা দ্বীপ রয়েছে, যেখানে আপনি যদি কখনও যাওয়ার সুযোগ পান, তা হলে আপনার সঙ্গে এমন অভিজ্ঞতা হতেই পারে।একটা দ্বীপ। যেখানে ছয় মাস বাদে বাদেই বদলে যায় দেশ। মানে ছয় মাস আগে দ্বীপটি যে দেশের ছিল, ছয় মাস পর সেই দ্বীপটিই আবার অন্য দেশের।

এমনটা আবার হয় নাকি! হ্যাঁ হয়। পৃথিবীর বুকে এমনই একটা দ্বীপ রয়েছে। যার নাম ফে‌জ়েন্ট দ্বীপ। ফ্রান্স ও স্পেনের যৌথ মালিকানা রয়েছে ওই দ্বীপে।বছরের পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ওই দ্বীপটি থাকে স্পেন সরকারের অধীনে। অর্থাৎ, ওই সময় আপনি যদি ওই দ্বীপে পা রাখেন, তা হলে বুঝবেন ফ্রান্সে রয়েছেন। আবার, বছরের পয়লা অগস্ট থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ওই দ্বীপটি ফ্রান্স সরকারের অধীনে থাকে। এই ভাবে ছয় মাস অন্তর অন্তর দ্বীপটি দুই দেশের অধীনে থাকে।ফেজ়েন্ট দ্বীপ হল সবচেয়ে ছোট ও পুরনো ‘কন্ডিমিনিয়াম’। অর্থাৎ, এমন একটা অঞ্চল, যেখানে একাধিক দেশ নিজেদের মধ্যে কোনও সীমান্ত ভাগাভাগি না করে সমান ভাবে সেখানে আধিপত্য বিস্তার করে।

```

এ ক্ষেত্রে যেমন ফ্রান্স ও স্পেন যৌথ ভাবে ওই দ্বীপটি চালনা করে।ফ্রান্স ও স্পেনকে আলাদা করেছে বিদাসোয়া নামের একটি নদী। ওই নদীর মাঝখানেই রয়েছে একটা সুন্দর দ্বীপ। আর তার নামই ফেজ়েন্ট দ্বীপ।এই দ্বীপের কথা জেনে যদি আপনি সেখানে যাওয়ার কথা ভাবেন, তা হলে সেই পরিকল্পনা কিন্তু সফল হবে না। কারণ ওই দ্বীপে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এমনটি, ফ্রান্স ও স্পেনের নাগরিকরাও সেখানে যেতে পারবেন না। অনুমতি নেই পর্যটকদেরও।শুধু মাত্র ফ্রান্স ও স্পেনের নৌবাহিনীর সদস্যরাই ওই দ্বীপে যেতে পারেন। দ্বীপটি যখন যে দেশের অধীনে থাকে, তখন সেই দেশ দ্বীপটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বভার সামলায়। রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই ওই দ্বীপে পা রাখেন দু’দেশের নৌবাহিনীর সদস্যরা।

দু’দেশের নৌবাহিনীর সদস্য ছাড়াও ফ্রান্স ও স্পেনের দুই পুরসভার কর্মীরাও ওই দ্বীপে পা রাখার অনুমতি পান। স্পেনের ইরুন পুর সরকার ও ফ্রান্সের হেনদায়ে পুরসভার কর্মীরা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওই দ্বীপে যান। মূলত দ্বীপটি সাফাই, বাগানের কাজ সামলান পুরকর্মীরা।১৬৫৯ সালের ৭ নভেম্বর ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ শেষে স্পেন ও ফ্রান্সের মধ্যে শান্তি চুক্তি হয়েছিল। যা ‘পিয়েরিনিস চুক্তি’ হিসাবে পরিচিত। ফেজ়েন্ট দ্বীপেই দুই দেশের মধ্যে সেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।এই চুক্তির পর থেকেই দ্বীপটি ছয় মাস অন্তর অন্তর দুই দেশের অধীনে থাকে।

```

তবে একই সময়ে কখনও ওই দ্বীপটি দুই দেশের অধীনে থাকে না।ওই দ্বীপে অতীতে বিয়ের আসরও বসেছিল। সেই ইতিহাসও জড়িয়ে রয়েছে দ্বীপে। ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুইসের সঙ্গে স্পেনের রাজা চতুর্থ ফিলিপের মেয়ের রাজকীয় বিয়ের সাক্ষী ছিল ফেজ়েন্ট দ্বীপ।দ্বীপে কোনও সৌধ নেই। তবে অতীতের ঘটনাবলির কথা উল্লেখ করে একটি স্তম্ভ রয়েছে। স্পেনের দিকে স্তম্ভের গায়ে স্প্যানিশ ভাষায় লেখা রয়েছে সেই বিবরণ। আর ফ্রান্সের দিকে তা লেখা রয়েছে ফরাসি ভাষায়। বছরের পর বছর ধরে দুই দেশের ভরণপোষণে পৃথিবীর বুকে আলো করে রয়েছে এই অনন্য দ্বীপ।