ফুটপাতে থাকতেন,স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে টেনে একা দাহ করেন, রাজপাল যাদবের কঠিন লড়াই জানলে অবাক হবেন!

দর্শককে হাসতে হাসতে কাঁদিয়ে দেওয়া রাজপাল যাদবের জীবনের এই ট্র্যাজেডি হয়তো চোখে জল এনে দেবে অনেকেরই। কমিক টাইমিংয়ের কারণে ঘরে ঘরে পরিচিত হয়ে উঠেছেন তিনি বর্তমানে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রাজপালকে বলতে শোনা যায়, তাঁর প্রথম স্ত্রী যখন মারা যায় তখন তাঁর বয়স মাত্র ২০ বছর। বেশ অল্প বয়সেই বিয়ে করেন অভিনেতা রাজপাল যাদব। সেই সময় কাজ করতেন এক কাপড়ের কারখানায়। বাড়িতে মা-বাবা-বোন ছাড়াও ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। মাত্র ২০ বছর বয়সেই স্ত্রীকে হারান। সেই সময় মেয়ের বয়স ১ দিন। সন্তান প্রসব করতে গিয়েই মৃত্যু হয় অভিনেতার স্ত্রীর। নিজের হাতে স্ত্রীর মৃতদেহ সৎকার করেন। এখনও সেই যন্ত্রণা যেন রয়েছে গিয়েছে তাঁর মনের অন্দরে।

পর্দায় বরাবরই তাঁকে দেখা গিয়েছে কৌতুকাভিনেতার চরিত্রে। হাস্যরসের কারণেই তিনি জনপ্রিয় দর্শকমহলে। সদ্য ২৫ বছর পূর্ণ করেছেন এই ইন্ডাস্ট্রিতে। যদিও ২৫ বছরে এক-দু’বার বিতর্কেও জড়িয়েছেন। কিন্তু অভিনেতা রাজপালের বাইরে মানুষ রাজপালের অন্দরের যন্ত্রণা কথা এত দিন ছিল অজানা। এ বার সে কথাই প্রকাশ্যে বললেন অভিনেতা।সালটা ১৯৯১। সেই সময় প্রথম স্ত্রীকে হারান রাজপাল। আর্থিক সঙ্গতি তেমন ছিল না। ঘর থেকে দূরে অন্য শহরে গিয়ে চাকরি করতেন কাপড়ের কারখানায়। কথা ছিল, সন্তান জন্মের সময় দেখা করবেন স্ত্রীর সঙ্গে। কিন্তু তা আর হল না। গর্ভে সন্তান নিয়েই মারা গেলেন অভিনেতার স্ত্রী।

```

রাজপালের কথায়, ‘‘ওই বয়সে আবেগ নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। কষ্ট করে একটা চাকরি জুটিয়েছিলাম কাপড়ের কারখানায়। ভেবেছিলাম সুখের সংসার হবে। সন্তানের জন্ম দিতে স্ত্রী গিয়ে মারা গেল। এক দিন পরেই ওঁর সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়ে উঠল না। কী কপাল!’’ প্রথম স্ত্রী মৃত্যুর পর শুরু হল তাঁর অভিনেতার হয়ে ওঠার লড়াই। ‘ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা’-তে পড়াশোনা। তার পর একাধিক টিভি শো-তে কাজ করেন রাজপাল। অবশেষে ২০০০ সালে বড় পর্দায় অভিষেক ‘জঙ্গল’ ছবির মাধ্যমে। অভিনেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সময় লেগে যায় প্রায় ১৩ বছর। প্রথম ছবি মুক্তির পর ২০০১ সালে একটি ছবির শুটিং করতে গিয়ে আলাপ হয় বর্তমান স্ত্রী রাধার সঙ্গে। দুই পরিবারের সম্মতিতেই ২০০৩ সালে ফের ঘর বাঁধেন অভিনেতা।

দ্য লাল্লানটপের সঙ্গে কথা বলার সময় রাজপাল বলেন, ‘আগেকার দিনে আপনি যদি একটা ঠিকঠাক চাকরি পেয়ে যান, তাহলেই পরিবার আপনার বিয়ে দিয়ে দিত। আমারও তাই হয়েছিল। বাবা বিয়ে দিয়ে দেন ২০ বছর বয়সেই। আমার প্রথম স্ত্রী বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে মারা যান। আমার পরের দিন ওকে দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। আর সেদিন আমি ওর লাশ কাঁধে নিয়ে শ্মশানে যাই। তবে আমার পরিবারকে, আমার মা-কে, আমার শ্যালিকাকে অনেক ধন্যবাদ আমার মা মরা মেয়েটাকে ভালোবেসে বড় করার জন্য। ওকে মায়ের অভাব বুঝতে না দেওয়ার জন্য। ’

```

এই সাক্ষাৎকারেই তিনি তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী রাধা যাদব সম্পর্কে কথা বলেন। যাঁকে রাজপাল বিয়ে করেন ২০০৩ সালে। রাজপাল বলেন, ‘আমি কোনওদিন ওকে বলে দেইনি শাড়ি পরো বা অন্য কিছু। আমি আমার মায়ের সঙ্গে যেভাবে কথা বলি, ও নিজেও সেভাবে কথা বলি। ও নিজে থেকে আমাদের গ্রামের ভাষা শিখেছে। ওকে গ্রামে দেখলে কেউ বুঝতেও পারবে না ও ৫টা ভাষা জানে। একদিন গ্রামে গিয়ে দেখি ও মুখ ঢেকে বসে আছে। আসলে গ্রামের কিছু নিজস্ব নিয়ম নীতি আছে। ও সেগুলো মেনে চলে। আমার গুরুর পরে, আমার বাবা-মা, আর তারপর ও, আমায় সবচেয়ে বেশি সমর্থন করেছে। পুরো ১০০ শতাংশ। রাধা আমার প্রথম স্ত্রী থেকে আমার যে মেয়ে আছে, তাকেও ও নিজের করে নিয়েছে। এখন সেই মেয়ে বিয়ে করে লখনউতে সংসার করছে। আমার কোনও কৃতিত্ব নেই। সবটা আমার পরিবারের আর আমার স্ত্রীর। আমি শুধু মাধ্যম মাত্র।’