পাড়ার গরীব দর্জি,কোনরকমে সংসার চলে,তদন্ত করতেই উঠে এলো রক্তাক্ত বাস্তব!দিনে দর্জি আর রাতে…

এক ছাপোষা দর্জি। স্বভাব বেশ নম্র। ভাল লোক হিসাবেই তাঁকে জানতেন পাড়া-পড়শিরা। কিন্তু দিনের শেষে আঁধার নামলেই সেই ‘ভদ্রলোকের’ ভোল পাল্টে যেত। যে হাত দিয়ে সেলাই মেশিন চালিয়ে পোশাক তৈরি করতেন, সেই হাত দিয়েই ঝরাতেন রক্ত। দিনে দর্জি আর রাতে হয়ে যেতেন…।তাঁর নাম আদেশ খামরা। পাড়ার সবচেয়ে শান্তশিষ্ট ভদ্রলোক। তার আসল রূপ যে কি হতে পারে সেটা কল্পনাও করতে পারেননি এলাকাবাসী।

দিনের বেলায় দর্জি আর অন্ধকার নামলেই সে হয়ে যায় এক দুর্ধর্ষ খুনি। পাড়ার এই ভদ্রলোক যে খুনি হতে পারেন, তা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি আদেশের পড়শিরা। কিন্তু দিনের বেলার সেই সাধারণ দর্জিই ৩৩টি খুন করেছিলেন।২০১৮ সাল। সে বছরই পুলিশের জালে ধরা পড়েছিলেন আদেশ। তার পর যত তদন্ত এগিয়েছে, উঠে এসেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। রাত হলেই দর্জি আদেশ হয়ে যেতেন খুনি। কিন্তু কাদের খুন করতো সে? কেনই বা খুন করতো? তদন্তে জানা গেছে তাঁর নিশানায় থাকতেন লরি চালকরা।মধ্যপ্রদেশের রাইসেন জেলার মান্ডিদীপ এলাকার বাসিন্দা আদশ। দর্জি হিসাবে কাজ করতেন। ভদ্র স্বভাবের জন্য তাঁর সঙ্গে এলাকার অনেকের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় ছিল। যে ৩৩ জনকে খুন করেছেন আদেশ, তাঁরা সকলেই ট্রাক চালক। কিন্তু কেন ট্রাক চালকদের খুন করতেন আদেশ? কী ছিল তাঁর উদ্দেশ্য?

```

২০১০ সাল। সে বছরই অমরাবতীতে প্রথম এক ট্রাক চালককে খুন করেছিলেন আদেশ। এর পর যত দিন গড়িয়েছে, আদেশের হাতে ট্রাক চালকদের খুনের সংখ্যা ততই বেড়েছে। আদেশের খুন করার ধরন দেখে বিস্মিত হয়েছেন তদন্তকারীরা। মিশুকে স্বভাবের আদেশ, তাই অপরিচিত ট্রাক চালকদের সঙ্গে সহজেই মিশে যেতেন। অল্প আলাপেই ট্রাক চালকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলতেন। তার পর তাঁদের সঙ্গে মদ্যপান করতেন। ওই পানীয়তেই মাদক মিশিয়ে দিতেন আদেশ। যা পান করে নেশাচ্ছন্ন হয়ে পড়তেন ট্রাক চালকরা। তার পরই তাঁদের শ্বাসরোধ করে খুন করতেন আদেশ।খুনের পর তাঁদের দেহ লোপাট করা হত।ট্রাক চালকদের সঙ্গে আদেশের ভাব জমানোর কায়দাও ছিল বেশ চমকপ্রদ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মোবাইল চার্জার চেয়ে ট্রাক চালকদের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করতেন আদেশ। সেই কথোপকথনের মাধ্যমেই তাঁদের আস্থা অর্জন করতেন তিনি।

তবে সবটা একা নয়, রাতের হাইওয়েতে ট্রাক চালকদের খুন করতে আদেশের একটা ‘গ্যাং’ ছিল।কিন্তু কেন ট্রাক চালকদের খুন করতেন আদেশ? পুলিশ জানতে পেরেছিল যে, ট্রাক লুট করাই ছিল আসল উদ্দেশ্য। চালক বা খালাসিদের খুনের পর সেই ট্রাকের ভোল পাল্টে বিক্রি করতেন আদেশ।২ থেকে ৩ লক্ষ টাকায় ওই ট্রাকগুলি বিক্রি করতেন আদেশ।একের পর এক ট্রাক চালকের খুনের ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল সেই সময়। ধরপাকড় শুরু করেছিল পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছিল জয়করণ নামে এক যুবককে।জয়করণকে গ্রেফতারের পরই আদেশকে বাগে পায় পুলিশ। তবে আদেশকে পাকড়াও করতে গিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল খাকি উর্দিধারীদের। এমনকি, আদেশকে গ্রেফতারের পর পুলিশ আধিকারিকরা ভাবতেই পারেননি, তাঁদের জালে ধরা পড়েছে এক ভয়ঙ্কর খুনি।উত্তরপ্রদেশের জঙ্গলে টানা ৩ দিন ধরে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। রাতের বেলায় জঙ্গলের মধ্যে আদেশকে ধরেছিলেন মহিলা পুলিশ সুপার বিট্টু শর্মা। তাঁরা যে এক ‘সিরিয়াল কিলার’কে পাকড়াও করেছেন, তা প্রথমে টেরই পাননি পুলিশ আধিকারিকরা। পরে তাঁকে জেরা করতেই হতবাক হয়ে যায় পুলিশ।এত খুনের পরও আদেশের কোনও হেলদোল ছিল না। চোখেমুখে অনুতাপের কোনও চিহ্ন ছিল না। যে ৩৩ জনকে খুন করেছেন আদেশ, তাঁদের সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য পুলিশকে দেন তিনি।এক জন সাধারণ দর্জি কী ভাবে ‘সিরিয়াল কিলার’ হলেন? তাঁর নেপথ্যে কি কেউ ছিলেন?

```

‘ইকোনমিক টাইমস’ জানিয়ছে, এক খুনির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন আদেশ। তাঁকে তিনি ‘কাকু’ বলে ডাকতেন। তাঁর নাম অশোক খামরা।অশোকও একের পর এক ট্রাক চালকদের খুন করেছেন। সেই সংখ্যাটা ১০০। ২০১০ সালে গ্রেফতার করা হয়েছিল অশোককে। পুলিশি নিরাপত্তায় অশোককে ট্রেনে করে ভোপাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সেই সময়ই পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালান অশোক। তার পর থেকে তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।