অদ্ভুত সমাধি উদ্ধার মিশরের পিরামিডের পাশে! ফাঁস হলো হাজারো বছরের চাঞ্চল্যকর তথ্য!

সার দিয়ে মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে ত্রিকোণাকার পিরামিড। যাদের ঘিরে রয়েছে হাজারো রহস্য, সেই পিরামিড তৈরি করেছিলেন কারা? এই নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। ২০১০ সালে সেই পিরামিড প্রস্তুতকারী কর্মীদের সমাধি উদ্ধার করা হয়েছিল। তার পরেই পিরামিড নিয়ে অনেক তথ্য প্রকাশ্যে আসে। ভেঙে যায় প্রাচীন কিছু ধারণা। পিরামিড প্রস্ততকারীরা কি ক্রীতদাস ছিলেন? এই নিয়ে ভুল ধারণাও ভেঙেছে।জাহি হাওয়াসের নেতৃত্বাধীন প্রত্নতত্ত্ববিদদের একটি দল গিজায় একাধিক সমাধি উদ্ধার করেন। তারা জানায়, ওই সমাধিগুলি পিরামিড প্রস্তুতকারী কর্মীদের। খুফু এবং খাফরের সমাধিগুলি তৈরি করেছিলেন এই কর্মীরা।

১৯৯০ সালে একাধিক সমাধি আবিষ্কার করেছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। সেগুলি খ্রিস্টের জন্মের ২,৬৪৯ থেকে ২,৩৭৪ বছর আগের। চতুর্থ এবং পঞ্চম শাসনকারী বংশের আমলে সে সব তৈরি হয়েছিল। সেই সমাধির মতোই বেশ কিছু সমাধির হদিস পান জাহি।বছরের পর বছর ধরে তৈরি হয়েছিল পিরামিড। তৈরি করেছিলেন হাজার হাজার শ্রমিক। ইতিহাসবিদদের মতে, কর্মীদের কেন্দ্র করে গিজার পাশেই গড়ে উঠেছিল নতুন নগরসভ্যতা। তৈরি হয়েছিল বাড়ি, বেকারি, প্রেক্ষাগৃহ। সবই কর্মীদের জন্য। যে কর্মীরা পিরামিড তৈরি করতেন, তাঁদের সমাধিস্থলও তৈরি করা হয়েছিল। সেই সমাধিস্থল ছিল সম্রাটের পিরামিডের ঠিক পাশে। প্রত্নতত্ত্ববিদ জাহির মতে, এই সমাধি আবিষ্কারের পর একটি বিষয় স্পষ্ট হল যে, পিরামিড প্রস্তুতকারীরা ক্রীতদাস ছিলেন না।

```

ইতিহাসবিদদের একাংশ মনে করেন, ক্রীতদাসদের দিয়ে মিশরের সম্রাট এই পিরামিড তৈরি করাতেন। এর মধ্যে অন্যতম ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস। তিনি দাবি করেছিলেন, ক্রীতদাসদের দিয়ে তৈরি করানো হয়েছিল পিরামিড। তার পর অনেকেই সেই মত পোষণ করেছিলেন।কিছু কিছু মিশর বিশেষজ্ঞের আবার দাবি ছিল, ইহুদি দাসদের দিয়ে এই পিরামিড তৈরি করা হয়। অনেকে মনে করেন, ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট বুক অফ এক্সোডাস’ থেকেই এই ধারণার জন্ম। বেশ কিছু হলিউড ছবিতেও এই বিষয়টি দেখানো হয়েছিল।কিন্তু জেরুজালামের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ আমিহাই মাজ়ার এই দাবি মানতে চাননি। তিনি জানিয়েছেনস মিশরে যখন পিরামিড তৈরি হয়েছিল, তখন ইহুদিদের কোনও অস্তিত্বই ছিল না।পিরামিড প্রস্তুতকারী শ্রমিকরা ক্রীতদাস ছিলেন, এই ধারণাই ভেঙে যায় ওই কর্মীদের সমাধির হদিসের পর। জাহি বলেন, ‘‘রাজার পিরামিডের পাশেই কর্মীদের পিরামিড। এর থেকেই স্পষ্ট যে, ক্রীতদাসেরা এই পিরামিড তৈরি করেননি। কর্মীরা ক্রীতদাস হলে সম্রাটের পাশে তাঁদের সমাধি হত না।’’

জাহি দাবি করেছেন, পিরামিড প্রস্তুতকারীরা ছিলেন বেতনভুক শ্রমিক। পিরামিড প্রস্তুত করার বদলে তাঁদের টাকা দেওয়া হত। দিতেন সে দেশের সম্রাট।সম্রাটের সমাধির পাশে ওই কর্মীদের যে সমাধি মিলেছিল, তার মধ্যে একটি ছিল ইদু নামে এক ব্যক্তির। তিনিও পিরামিড তৈরি করেছিলেন বলে মত প্রত্নতত্ত্ববিদদের।ইদুর সমাধি আয়তাকার। মাটির ইটের তৈরি। তার উপর ঢালাই করা ছিল। সমাধির মধ্যে অনেক কুঠুরি ছিল। সেই কুঠুরিগুলি সাদা চুনাপাথরে তৈরি।খননকারী দলের মাথায় ছিলেন আদেল ওকাশা। তিনি বলেন, প্রত্যেক সমাধির মাথা ভল্টের মতো। মেমফিসদের ধর্মীয় বিশ্বাস মেনেই তৈরি এই সমাধি। এর আকৃতি দেখেই প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, এগুলি মিশরের চতুর্থ শাসকবংশের আমলে তৈরি। মিশরের গ্রাম দাহশুরের স্নেফরুর পিরামিডের পাশেও এই একই ধরনের সমাধি দেখা গিয়েছে।ইদুর সমাধির পশ্চিমে রয়েছে আরও কিছু সমাধি। ভিতর রয়েছে কফিনও। ইদুর সমাধির দক্ষিণে রয়েছে মাটির ইটের তৈরি একটি সমাধি। তার ভিতর রয়েছে একাধিক কুঠুরি। ওই প্রত্যেকটির মধ্যে রয়েছে একটি করে কঙ্কাল। পাশে মাটির তৈরি কোনও পাত্রের ভাঙা অংশ।

```

সমাধির মধ্যে কোনও সোনা, রত্ন বা দামি জিনিস ছিল না। ফলে এত হাজার বছর ধরে সেগুলিতে ডাকাতি হয়নি। সমাধির মধ্যে কঙ্কাল মিলেছে। মমি নয়। অর্থাৎ, শ্রমিকদের দেহ মমি করে রাখা হত না।সমাধিতে কঙ্কালের মাথা ছিল পশ্চিম দিকে। পা পূর্বে। প্রাচীন মিশরীয় ধর্মমতে এ ভাবেই দেহ রাখা হত। পাশে রাখা থাকত বেশ কিছু বয়াম, যাতে খাবার রাখা থাকত। মিশরীয়রা মনে করতেন, মৃত্যুর পর সে সব খেতেন মৃতেরা। শ্রমিকদের সমাধিতে কিছু মাটির পাত্রের ভগ্নাংশ মিলেছে।পিরামিড প্রস্তুতকারী কর্মীদের সমাধির হদিস মেলার পর সেই নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। ওই কর্মীদের জীবনযাপন কেমন ছিল, আর্থিক অবস্থা কেমন ছিল, সে সব খতিয়ে দেখতে শুরু করেন ইতিহাসবিদরা। তাঁরা জানান, মিশরের ব-দ্বীপ এবং উত্তর ভাগের বাসিন্দারা রোজ এই শ্রমিকদের জন্য খাবার পাঠাতেন।গবেষকদের মতে, পিরামিড তৈরি করা শ্রমিকদের খাওয়ার জন্য রোজ ২১টি মোষ এবং ২৩টি ভেড়া পাঠানো হত। পাঠাতেন মিশরের ব-দ্বীপ এবং উত্তর ভাগের বাসিন্দারা। মনে করা হত, বছরের পর বছর প্রায় নিয়মিত এই খাবার পাঠানো হত।গবেষকদের মতে, পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবারই পাঠানো হত শ্রমিকদের। যাতে তাঁরা ভাল ভাবে কাজ করতে পারেন। স্থানীয়েরা জানতেন, দুর্বলদের পক্ষে ওই বিপুল কাজ করা সম্ভব নয়। জাহির মতে, তিন মাসের শিফট ভাগ করা থাকত শ্রমিকদের জন্য। তিন মাস কাজ করে ছুটি নিতেন।

যদিও ওই শ্রমিকেরা রোজ কী খেতেন, সেই বিষয়ে এখনও গবেষণা চলছে। ওই পশুদের দুধ না কি মাংস খেতেন, সঙ্গে কোনও শস্য খেতেন কি না, তা এখনও জানা যায়নি। সঙ্গে শস্য খেলে তা আসত কী ভাবে? উঠছে প্রশ্ন।অনেক কঙ্কালের মধ্যে আর্থারাইটিসের লক্ষণ দেখা গিয়েছে। অর্থাৎ জীবৎকালে সেই ব্যক্তির বাত ছিল। মনে করা হয়, অতিরিক্ত খাটুনির কারণেই এ রকম হত। শরীরে আরও রোগের চিহ্নও মিলেছে।প্রত্নতত্ত্ববিদ জাহির মতে, যে সব বাসিন্দারা এই শ্রমিকদের জন্য খাবার পাঠাতেন, তাঁদের আর সম্রাটকে কর দিতে হত না। জাতীয় প্রকল্পে সাহায্য করার কারণে তাঁদের কর মকুব করা হত।