তিনি কলেজের লেকচারার, আবার তিনি কুলিও। অনেকেই একের বেশি পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। কিন্তু নাগেশু পাত্রের কাহিনি অন্য কথা বলে।দিনেরবেলায় নাগেশু ছাত্রছাত্রীদের কাছে ‘স্যর’। সেই নাগেশুই আবার রাতে রেলস্টেশনে কুলির কাজ করেন। যাত্রীদের ব্যাগপত্র বহন করেন। ঠিক যেন পেশার ‘অ্যান্টিক্লাইম্যাক্স’! স্বাভাবিক ভাবেই কৌতূহল জাগতে পারে, এক জন লেকচারার হয়েও কেন কুলির কাজ করেন নাগেশু? আর কাহিনির চমক এখানেই।
নাগেশু ওড়িশার গঞ্জাম জেলার মনোহর গ্রামের বাসিন্দা। একটি বেসরকারি কলেজে গেস্ট লেকচারার হিসাবে চাকরি করেন। মাসিক বেতন ৮ হাজার টাকা।রাতে বেহরামপুর স্টেশনে কুলির কাজ করেন নাগেশু। সেই কাজ করে মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করেন। নাগেশু জানিয়েছেন, লেকচারারের চাকরি করে যে বেতন পান, সেই ৮ হাজার টাকা সংসারে খরচ করেন। কুলির কাজ করে বাকি যে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করেন, সেই টাকা গরিব বাচ্চাদের পড়ানোর কাজে খরচ করেন নাগেশু।খুব গরিব পরিবারের ছেলে নাগেশু। আর্থিক অনটনের কারণে ২০০৬ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতেই পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়েছিল।
যে কারণে পড়াশোনা মাঝপথে ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে, সেই একই কারণে যাতে অন্য গরিব বাচ্চাদের লেখাপড়া মাঝপথেই থেমে না যায়, তাই সেই দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে। সেই থেকে গরিব বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়ার কাজ শুরু করেন নাগেশু। গ্রামে ঘুরে গরিব পরিবারের সন্তানদের জড়ো করতেন। তার পর তাদের নিজেই পড়াতেন। সেই কাজ আজও চালিয়ে যাচ্ছেন নাগেশু।গরিব পরিবারের সন্তানদের পড়ানোর জন্য কিন্তু একটি টাকাও নেন না নাগেশু। বরং নিজের উপার্জনের টাকা তাদের পড়াশোনার জন্য খরচ করেন।নাগেশ একটি কোচিং সেন্টারও খুলেছেন। আজ তাঁর ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অনেক।
বিপুল সংখ্যক পড়ুয়াদের সামলাতে তিনি ৪ জন শিক্ষকও রেখেছেন। নাগেশু জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় খরচও বাড়তে শুরু করেছিল। সংসারের পাশাপাশি কোচিং সেন্টার চালাতেও বেশ সমস্যা হচ্ছিল। তাই অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য কুলির পেশাকেই বেছে নিয়েছেন।২০১১ সালে বেহরামপুর স্টেশনে কুলির কাজ শুরু করেন নাগেশু। সেই কাজ শুরু করার পর নিজের অসমাপ্ত পড়াশোনা আবার চালু করেন। দূরশিক্ষায় দ্বাদশ পাশ করেন। তার পর বেহরামপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর করেন। নাগেশু অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ান। মূলত হিন্দি আর ওড়িয়া বিষয়টি তিনি দেখেন। বাকি বিষয়গুলি দেখাশোনার জন্য তাঁর কোচিং সেন্টারে শিক্ষক রয়েছেন।
এক জন লেকচারার হয়ে, কী ভাবে কুলির কাজ করছেন? এ প্রসঙ্গে নাগেশু এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমাকে এ ধরনের প্রশ্নের মুখে অনেক বার পড়তে হয়েছে। লোকে এ নিয়ে নানা রকম আলোচনাও করেন। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। আমার মতো যেন অন্য গরিব পরিবারের সন্তানরা মাঝপথে পড়া ছেড়ে না দেয়, তাই আগামী দিনেও এ কাজ করে যাব।”কুলির কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচও চালিয়েছেন নাগেশু। তাঁর কথায়, “বর্তমানে স্টেশনে চলমান সিঁড়ি হয়ে যাওয়ায়, এখন অনেক যাত্রী আর কুলির ভরসা করেন না। ফলে আয়ও কমছে।” তাই রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের কাছে নাগেশু আবেদন করেছেন, কুলিদের জন্য তিনি যেন কোনও ব্যবস্থা করেন।