বাড়িতে বিয়ের সানাই বাজলেই বাঙালি ছোটে গয়নার দোকানে। কনেকে সোনার গয়নায় সাজিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে তোলা হয়। তাঁর কানে, গলায়, হাতে— সোনার ছড়াছড়ি।শুধু কি বিয়ে? জন্মদিন থেকে অন্নপ্রাশন, বিবাহবার্ষিকী থেকে দুর্গাপুজো— সোনার গয়না পরার সুযোগ সহজে ছাড়ে না বাঙালি। ধনতেরসেও সোনার দোকানে ভিড় করেন অনেকে।চাইলেই ইচ্ছামতো সোনা কিনে ফেলেন অনেকে, কিন্তু তা সঞ্চয়ের নিয়ম হয়তো সকলে জানেন না। সরকার নিজের কাছে সোনা রাখার বিষয়ে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দিয়েছে। যা না মানলে দরজায় কড়া নাড়তে পারে বিপদ।যথেচ্ছ সোনাদানা নিজের কাছে রাখা যায় না।
বাড়িতে কে কতটা সোনা রাখতে পারবেন, তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে সরকার। পুরুষ এবং নারীর ক্ষেত্রে সেই নিয়ম আলাদা।সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, এক জন বিবাহিত মহিলা বাড়িতে নিজের কাছে সর্বাধিক ৫০০ গ্রাম সোনা রাখতে পারেন। বিবাহিত মহিলাদের জন্য এই পরিমাণ সোনায় কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করেনি সরকার।অবিবাহিত মহিলারাও চাইলেই নিজের কাছে সোনাদানা রাখতে পারেন। কিন্তু তাঁদের ক্ষেত্রে নিয়ম কিছুটা আলাদা। তাঁরা সর্বাধিক ২৫০ গ্রাম সোনা নিজের কাছে রাখতে পারেন।শুধু তো মহিলা নন, পুরুষেরাও নিজেদের কাছে সোনা রাখতে পারেন। তাঁরাও সোনার গয়না পরেন। তবে পুরুষের ক্ষেত্রে….
বাড়িতে সোনা রাখার পরিমাণ ১০০ গ্রামের বেশি নয়।সরকার নির্ধারিত এই নিয়ম না মানলে কী হবে? কেনই বা সোনার সঞ্চয়ে এমন বিধি বেঁধে দেওয়া হয়েছে? ঘরে ঘরে হলুদ ধাতু ঠিক কোন বিপদ ডেকে আনতে পারে?সরকার যে পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, সেই মতো সোনা রাখলে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েও তা বাজেয়াপ্ত করতে পারবে না আয়কর দফতর। এই পরিমাণ সোনার জন্য প্রশাসনকে কোনও রকম তথ্যপ্রমাণ, নথিপত্রও দেখাতে হয় না।কিন্তু কেউ যদি সরকার নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি সোনা নিজের কাছে রাখতে চান, তবে তাঁকে আয়ের উৎস-সহ যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য আয়কর দফতরকে জানাতে হবে। কেন সোনা কেনা হল, কোথা থেকে কী ভাবে তা কিনলেন গ্রাহক, উত্তর দিতে হতে পারে একাধিক প্রশ্নের।
সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডিরেক্ট ট্যাক্স (সিবিডিটি) ২০১৬ সালের এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যদি কোনও নাগরিকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণের তুলনায় বেশি সোনা পাওয়া যায় এবং তিনি সেই সোনা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ সরকারকে দেখাতে পারেন, তা হলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে না।সোনা যদি আয়ের উৎস গোপন না রেখে কেনা হয়ে থাকে বা কেউ যদি টাকা জমিয়ে সোনা কেনেন, উত্তরাধিকার সূত্রে সোনার মালিকানা পেয়ে থাকেন, তা হলে সেই সোনার জন্য তাঁকে কোনও করও দিতে হয় না।তবে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি সোনা কেউ নিজের কাছে রাখলে এবং তার জন্য উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ জমা দিতে না পারলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জেল পর্যন্ত হতে পারে। আয়কর দফতর তাঁর কাছ থেকে অতিরিক্ত সোনা বাজেয়াপ্ত করে নিতে পারে।
যদি সোনা কেনার তিন বছর বা তার চেয়েও কম সময়ের মধ্যে কেউ তা বিক্রি করে দিতে চান, তবে তা শর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেইনের আওতায় আসে এবং গ্রাহককে সেই অনুযায়ী কর দিতে হয়।কেউ যদি সোনা কেনার তিন বছর বা তার বেশি সময় পর তা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন, তবে সে ক্ষেত্রে লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইন প্রযুক্ত হয়। সেই অনুযায়ী কর দিতে হয় গ্রাহককে।যদিও কারও বার্ষিক আয় ৫০ লক্ষের বেশি হয়, তা হলে আয়কর রিটার্ন ফাইল করার সময় জানাতে হবে তাঁর কাছে কত সোনা আছে, সেই সোনা কত টাকায় কিনেছিলেন এবং বর্তমানে তার মূল্য কত।