সাধারণত আমরা দেখে থাকি যে বিভিন্ন এলাকাতে যে সমস্ত মিষ্টির দোকান রয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই সমস্ত মিস্টির দোকানে অনেক মৌমাছি মিস্টির উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। দোকানী কোনভাবেই তাদের ঠেকাতে পারে না। এখন প্রশ্ন হল মৌমাছি ফুল ছেড়ে মিস্টিতে কেন??? মৌমাছি সাধারণত মধু তৈরি করে এবং সে ক্ষেত্রে ফুল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে মৌমাছি কি এবার মিস্টি থেকে মধু তৈরী করবে??? কেন তারা মিষ্টির দোকানে ভিড় করে? আসুন জেনে নেই আসলেই ব্যাপারটি কি?
আমরা জানি, মৌমাছি ফুলে ফুলে ঘুরে নেক্টার বা ফুলরস থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকে কেননা মৌমাছি জানে সারাবছর ফুল থাকে না। তাই যখন ফুল থাকবেনা তখনকার কথা চিন্তা করে তারা তাদের খাদ্য মধু সংগ্রহ করে থাকে। কিন্ত আমরা তো তাদের সংগৃহিত মধু খেয়ে ফেলি ফলে তাদের অফ সীজনে অর্থাৎ যখন ফুল থাকে না তখন তাদের খাদ্যের সংকট দেখা দেয়। ফলশ্রুতিতে শ্রমিক মৌমাছি হন্যে হয়ে খাবার খুঁজে বেড়ায়। তখন তারা মিস্টি অর্থাৎ চিনি জাতীয় খাদ্যের উপর হামলে পড়ে। আচ্ছা তারা কি এটা করে মধু বানানোর জন্য? নারে ভাই জীবন বাঁচানোর তাগিদে।
চিনি থেকে মৌমাছি মধু বানাতে পারে না এটা আমার কথা নয় বিজ্ঞানের কথা।আর এই ধারণার উপর ভিত্তি করে অনেকে চাষকৃত মধু খান না। তাদের ধারণা মৌ চাষিরা মৌমাছিকে চিনি খাইয়ে মধু বানায়,এটা সম্পুর্ণ ভুল ধারনা। চিনি থেকেই মধু বানালে তো তাদের কস্ট করে মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়ানোর দরকার হয় না ঘরে বসেই বানাতে পারে। একটা মৌ খামার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিতে কি পরিমাণ কস্ট কল্পনাও করতে পারবেন না। যাইহোক তাহলে কি মৌ চাষিরা চিনি দেয় না??? অবশ্যই দেয় যখন প্রকৃতিতে ফুল থাকে না। বুনো মৌমাছি দোকানে দোকানে বা বিভিন্ন জায়গায় খাদ্য খেয়ে জীবন বাঁচায় কিন্ত পালিত মৌমাছির কি হবে???
আর তাই মৌ চাষিরা অফ সীজনে তাদের চিনি খাইয়ে বাচিয়ে রাখে যতদিন না প্রকৃতি আবার ফুলে ফুলে ভরে যায়। তখন তারা ফুলের আশেপাশে মৌ বক্স রেখে মধু সংগ্রহ করে থাকে। তাই নিশ্চিত মনে আপনি চাষ করা মধু খেতে পারেন ইনশাআল্লাহ। পরিশেষে সতর্ক করতে চাই। আমরা তো মানুষ আমাদের মাঝে ভালমন্দ আছেই তেমনি কিছু কিছু মৌ চাষি ফুলের সীজনেও ফিডিং করায় অর্থাৎ চিনি খাওয়ায়। বিশেষ করে যখন ফুলের সীজনে নেক্টার কম থাকে যেমন বরই ফুলের সীজন। তবে এদের সংখ্যা দিন দিন কমছে আলহামদুলিল্লাহ আমাদের সচেতনতার জন্য।
তাই আমরা ভেজাল মধুর জন্য শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের না দুষে আসুন সচেতন হই। আপনার আমার সচেতনতাই পারে এদের রুখতে। আসুন সবাই সচেতন হই, নিয়মিত মধু খাই, চিনির বিষাক্ত থাবা থেকে বাঁচি এবং সর্বোপরি মধুর এই সম্ভাবনাময় খাতকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করি।©