পরণে কলকাতা পুলিশের উর্দি, পায়ে মোটা বুট। পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে বাহন বাইক। কিন্তু ট্রাফিক সার্জেন্ট পড়াচ্ছেন ফুটপাথের এক শিশুকে। সম্প্রতি কলকাতা পুলিশ নিজেদের ফেসবুক পেজে এমনই এক ‘অভিনব ক্লাসের’ ছবি পোস্ট করেছে। কলকাতা পুলিশ ওই পোস্টে জানিয়েছে, বালিগঞ্জ আইটিআইয়ের কাছে প্রায় প্রতিদিনই ডিউটি পড়ে কলকাতা পুলিশের সাউথ-ইস্ট ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট প্রকাশ ঘোষের। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই চোখ পড়ত বছর আটের এক শিশুর দিকে। প্রতিদিনই ওই বাচ্চাটিকে এলাকার আশেপাশে রাস্তায়, ফুটপাথে খেলাধুলা করতে দেখতেন প্রকাশ। নিজে থেকেই আলাপ করতে এগিয়ে জানতে পারেন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ওই খুদে।
শিশুর মা পাশেই রাস্তার ধারের একটি খাবারের দোকানে কাজ করেন। ফুটপাথেই জীবন মায়েপোয়ের। একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায় বেশ কষ্ট করেই মা ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছেন একটি সরকারি স্কুলে। ছেলেকে নিয়ে অনেক আশা মায়ের। কিন্তু এত কষ্ট করে পড়াশোনা শেখানোর পরেও সম্প্রতি ছেলের বিন্দুমাত্র মন বসছিল না পড়ায়! ওই খাবারের দোকানের কাছাকাছিই কাজ করায় ট্রাফিক সার্জেন্ট প্রকাশকে চিনতেন তিনি। একদিন কথায় কথায় তাঁর কাছে নিজের উদ্বেগের কথা ব্যক্ত করে ফেলেন ওই শিশুর মা।
কলকাতা পুলিশ তাঁদের ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, সবটা শুনে সাধ্যমতো সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন প্রকাশ। তবে তিনি যে বিষয়টিকে এতটা গুরুত্ব দেবেন, তা বোধহয় আন্দাজ করতে পারেননি ওই শিশুর মা-ও। যেদিন যেদিন ওই চত্বরে ডিউটি থাকে প্রকাশের, নিয়ম করে পড়াতে বসান শিশুটিকে। কোনওদিন ট্রাফিক সামলানোর ফাঁকে ফাঁকে, আবার কোনওদিন ডিউটি শেষ করেও বাচ্চার পড়শোনা দেখিয়ে দেন তিনি। শুধু পড়ানোর সময় বের করা না, রীতিমতো হোমওয়ার্ক দেওয়া এবং তা দেখে দেওয়া, বানান ভুল শুধরে দেওয়া, উচ্চারণ ঠিক করে দেওয়া, এমনকি হাতের লেখা পর্যন্ত ঠিক করে দেওয়া, সবটাই করেন প্রকাশ।
কলকাতা পুলিশ ওই পোস্টে জানিয়েছে, গায়ে উর্দি এবং পায়ে গেটার্স থাকায় বসে পড়াতে বেশ অসুবিধে হয় প্রকাশের। তাই একটি গাছের সরু ডালের সাহায্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই পড়ান, ডালটিকেই পড়ানোর সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করেন এই শিক্ষক-পুলিশ।
পড়াশোনাতে ফের মন বসছে খুদে পড়ুয়ার। ফলে মায়েরও অসীম আস্থা জন্মেছে ‘শিক্ষক’ প্রকাশের উপর। একদিকে নিয়ম মেনে শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, অন্যদিকে একটি শিশুর বুনিয়াদি শিক্ষাকে মজবুত করা, দুই কর্তব্যই সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রকাশ।