১৯৭১সালে খুন হন মহিলা,৫০ বছর পর খুনিকে ধরিয়ে দিল সিগারেট!কিভাবে?জানলে অবাক হবেন!

গলায় গভীর কালশিটে দাগ। চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে এসেছে। জিভও বাইরের দিকে একটু ঝোলা। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে আমেরিকার ভার্মন্টে স্কুলশিক্ষিকা রিটা কুরানকে এই ভাবেই উদ্ধার করেন তাঁর সঙ্গে একই ভাড়াবাড়িতে থাকা বান্ধবী। কে খুন করল রিটাকে? খুনিকে ধরতে ৫০ বছরের বেশি সময় লেগে গিয়েছে পুলিশের!৫০ বছরেরও বেশি আগে ১৯৭১-এর জুলাই মাসে নিজের ভাড়াঘরে নৃশংস ভাবে খুন হন স্কুলশিক্ষিকা রিটা। রিটার সঙ্গে একই ঘরে ভাড়া থাকা বান্ধবী তাঁর মৃতদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে।তদন্তে নেমে পুলিশ তখন সেই হত্যাকাণ্ডের কোনও সুরাহা করতে পারেনি। সুরাহা হয় ৫০ বছর পর। কে এবং কেন এই খুন করেছে তা জানা যায় চলতি বছর।

একটি সিগারেটের পুড়ে যাওয়া টুকরো এবং একটি পোশাকের সাহায্যে এই খুনের সমাধান হয়।পুলিশের দাবি, হত্যাকারীর নাম উইলিয়াম ডেরুস। তিনি কুরানের সঙ্গে বার্লিংটন অ্যাপার্টমেন্টের আবাসনেই বসবাস করতেন। ডিএনএ এবং জেনেটিক প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণেই তারা অপরাধীকে ধরতে পেরেছে বলেও মঙ্গলবার ভার্মেন্টের পুলিশ জানিয়েছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন যে, তাঁরা নিশ্চিত যে রিটাকে খুন করেছিলেন ডেরুসই। কিন্তু 50 বছর পর কিভাবে পুলিশ খুনিকে ধরলো আর ঘটনার রাতে ঠিক কি হয়েছিল?ভার্মন্টের পুলিশ জানিয়েছে, রিটা যে আবাসনে থাকতেন, সেই একই আবাসনের দোতলায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন ডেরুস।তদন্তকারীদের দাবি, ১৯৭১ সালের জুলাইয়ে খুনের ঘটনার রাতে…

```

ডেরুস তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান।ঘর থেকে বেরোনোর সময় ২৪ বছরের রিটার মুখোমুখি হন ডেরুস। দু’জনের মধ্যে কোনও একটি বিষয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হলে রিটার উপর চড়াও হন ডেরুস। এর পর রিটাকে টানতে টানতে তাঁরই ঘরে নিয়ে গিয়ে প্রথমে বেধড়ক মারধর করেন। পরে তাঁর গলা টিপে খুন করেন ডেরুস।খুনের পর দিন সকালে তদন্তে নেমে যখন তদন্তকারীরা ডেরুস এবং তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাঁরা জানান, সারা রাত একসঙ্গেই ছিলেন। তাঁরা পুলিশকে বিভ্রান্ত করার জন্য এ-ও জানান যে, তাঁরা কোনও আওয়াজ শোনেননি বা কাউকে রিটার ঘর থেকে বেরোতে দেখেননি।পুলিশের দাবি, তদন্তকারীরা চলে যাওয়ার পরে ডেরুস তাঁর স্ত্রীকে সাবধান করেছিলেন যে, ভবিষ্যতে যদি আবার তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তা হলে যেন তিনি বয়ান না পাল্টান।ডেরুস নাকি তাঁর স্ত্রীকে এ-ও বুঝিয়েছিলেন যে, তিনি এই খুন করেননি। কিন্তু তাঁর অতীত অপরাধ-জর্জরিত। তাই পুলিশ তাঁকেই এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করে নিতে পারে। আর সেই কারণে ডেরুসের স্ত্রী কখনও নিজের বয়ান বদলাননি। হত্যাকাণ্ডের দিন ডেরুস যে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন সেই তথ্য অজানাই থেকে যায় তদন্তকারীদের।

গোয়েন্দা জেমস ট্রিয়েব জানান, রিটা খুনের ঘটনায় কোনও খুনিকে ধরা না গেলেও সেই মামলা বন্ধ করা হয়নি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সেই সময় একটি সিগারেটের পোড়া টুকরো উদ্ধার করেছিল। ২০১৪ সালে সেই সিগারেটের টুকরোর ডিএনএ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন তদন্তকারীরা। সেই টুকরোতে লেগে থাকা ডিএনএ সম্পর্কে তথ্য বার করা হয়, এই ডিএনএ-র সঙ্গে অন্য কোনও অপরাধীর ডিনএ-র মিল পাওয়া যায়নি। ২০১৯ সালে পুনরায় তদন্ত শুরু হয়। গোয়েন্দাদের একটি বিশেষ দল গঠন করেন তিনি। সেই দলে নিয়োগ করা হয় প্রযুক্তি এবং ডিএনএ বিশেষজ্ঞদের। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ‘জেনেটিক জিনিওলজি’ পদ্ধতি ব্যবহার করে সিগারেটের টুকরোয় লেগে থাকা ডিএনএ বিশ্লেষণ করা হবে। বিশ্লেষণ করে দেখা হবে রিটার পোশাকের টুকরোতে লেগে থাকা ডিএনএ-ও।‘সন্দেহের তালিকায় থাকা সকলের পরিবার-আত্মীয়দের জিন এবং ডিএনএ-র সঙ্গে সিগারেটের টুকরো এবং পোশাকে থাকা ডিএনএ মিলিয়ে দেখা শুরু হয়।

```

জিন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডেরুসের আত্মীয়দের ডিএনএ-র সঙ্গে সিগারেটে থাকা ডিএনএ-র সব থেকে বেশি মিল আছে। তদন্তকারীরা এর পর ডেরুসের এক সৎভাইকে খুঁজে পান। তাঁর কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করার পর তা সিগারেটের ডিএনএ-র সঙ্গে প্রায় মিলে যায়।তদন্তকারীরা দেখেন সিগারেটের ডিএনএ এবং রিটার পোশাক থেকে পাওয়া ডিএনএ হুবহু মিলে গিয়েছে। তদন্তকারীরা তখন ডেরুসের তৎকালীন স্ত্রীকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেই সময় তিনি স্বীকার করেন যে, ঘটনার রাতে ডেরুস কয়েক ঘণ্টার জন্য বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন। এর পরই ডেরুসকে হত্যাকারী হিসাবে চিহ্নিত করে পুলিশ।তবে অভিযুক্ত ডেরুস বর্তমানে বেঁচে নেই। পুলিশের দাবি, রিটা হত্যাকারী ডেরুস ১৯৮৬ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে অতিরিক্ত মাদকসেবনের কারণে মারা যান। তাই স্বাভাবিক ভাবেই মামলাটির নিষ্পত্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ।