আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। তারপরই ইতিহাস তৈরি করবে ভারত। সব ঠিকঠাক থাকলে বুধবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে ভারতের চন্দ্রযান-৩। ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ যদি সফল ভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে তবে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে কৃতিত্ব অর্জন করবে ভারত। কারণ এখনও পর্যন্ত কোনও দেশ চাঁদের এই অংশে মহাকাশযান অবতরণ করাতে পারেনি। ইসরোর তরফে ঘোষণা করা হয়েছে ২৩ অগাস্ট সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের বুকে অবতরণ করবে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার মডিউল। বলার অপেক্ষা রাখে না এই মুহূর্তের জন্য আমরা সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। মুহূর্তটাকে চেটেপুটে উপভোগ করবে দেশবাসী। উদযাপনের মেজাজ থাকবে দেশ জুড়ে। তবে ইসরোর চিত্রটা কিন্তু একটু হলেও আলাদা রকম হবে। হ্যাঁ, বিজ্ঞানীরাও আনন্দ পাবেন, হাসি ফুটবে তাঁদের ঠোঁটেও কিন্তু অবতরণের পরই শুরু হবে আসল ‘খেলা’।
বিজ্ঞানীদের কাজ আরও বাড়বে। কারণ অবতরণের পর আসল পরীক্ষা-নিরীক্ষা কাজ শুরু করবে রোভার ‘প্রজ্ঞান’, অজানাকে জানতে চেষ্টা চালাবে, যার জন্য এত দিনের অপেক্ষা। আর বিজ্ঞানীরা সেই কাজটি পরিচালনায় নিরন্তর ব্যস্ত থাকবেন। পৃথিবীর হিসেবে ১৪ দিন যা চাঁদের নিরিখে এক চন্দ্রবেলা হিসেবে কাজ করবে চন্দ্রযান-৩। চন্দ্রযান-৩-এ থাকা পাঁচটি বৈজ্ঞানিক যন্ত্র, আর একটু পরিষ্কার করে বললে ল্যান্ডারে থাকা থাকা ৩টি পেলোড ও রোভারে থাকা ২টি পেলোড থেকে আসা ভুরি ভুরি তথ্য বিশ্লেষণের কাজে ব্যস্ত থাকবেন তাঁরা।
চাঁদের পৃষ্ঠ ছোঁয়ার কিছুক্ষণ পরেই, বিক্রম ল্যান্ডারের এক পাশের প্যানেলটি খুলে যাবে। বেরিয়ে আসবে রোভার ‘প্রজ্ঞান’। এটি চাঁদের পৃষ্ঠে ঘুরে বেরিয়ে একাধিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে। রোভারের ছয়টি চাকায় খদিত রয়েছে জাতীয় পতাকার ছবি ও ইসরোর লোগো। ল্যান্ডারটি অবতরণের চার ঘণ্টা পরে বেরিয়ে আসবে এই রোভার। তারপর প্রতি সেকেন্ডে ১ সেমি বেগে ঘুরে-ফিরে বেড়াবে। অবতরণ স্থলের চারপাশ স্ক্যান করতে ব্যবহার করবে নেভিগেশন ক্যামেরা। রোভারটি ঘুরে ফিরে বেড়ানোর সময় চাঁদের পৃষ্ঠে ভারতের পতাকা ও ইসরোর লোগোর ছাপ পড়ে যাবে। ভারতের চিহ্ন আঁকা হবে চাঁদের বুকে।চাঁদের পৃষ্ঠে নানা ডেটা সরবরাহ করতে রোভারটিতে রয়েছে একাধিক পেলোড। চাঁদের বায়ুমণ্ডলের মৌলিক গঠনের তথ্য সংগ্রহ করবে এবং ল্যান্ডারে ডেটা পাঠাবে।
তিনটি পেলোড সহ, বিক্রম ল্যান্ডারটি কাছাকাছি পৃষ্ঠের প্লাজমা (আয়ন এবং ইলেকট্রন) ঘনত্ব পরিমাপ করবে, চন্দ্র পৃষ্ঠের তাপীয় বৈশিষ্ট্যগুলির পরিমাপ করবে, অবতরণ স্থানের চারপাশে কম্পন পরিমাপ করবে এবং চন্দ্রের ভূত্বক এবং ম্যান্টেলের গঠনকে চিত্রিত করবে। সৌরশক্তি চালিত ল্যান্ডার এবং রোভারটি চাঁদের চারপাশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে দুই সপ্তাহ (পৃথিবীর হিসেবে) সময় পাবে। রোভার শুধুমাত্র ল্যান্ডারের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম, যা সরাসরি পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। চন্দ্রযান-২ অরবিটারকে কন্টিনজেন্সি কমিউনিকেশন রিলে হিসেবেও ব্যবহার করা হবে। সোমবার, চন্দ্রযান-২ অরবিটার ল্যান্ডার মডিউলের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেছে।
ইসরো চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, প্রয়োজনে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সময় বাড়ানো হতে পারে। এক চন্দ্রদিনের পরিবর্তে দুই চন্দ্রদিনও কাজ করতে পারে চন্দ্রযান-৩। তবে সেক্ষেত্রে ল্যান্ডার ও রোভারটিকে দ্বিতীয় চন্দ্রদিন পর্যন্ত কার্যকরী থাকতে দক্ষিণ মেরুতে এক চন্দ্ররাতে (পৃথিবীর হিসেবে প্রায় ১৪ দিন) মাইনাস ২৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হিমাঙ্কের তাপমাত্রা সহ্য করতে হবে। আশা করা হচ্ছে প্রয়োজনে এই ঠান্ডাও সহ্য করে নিতে পারবে ল্যান্ডার ও রোভার।