ISRO News ভারতকে চাঁদে পৌঁছে দিয়েছেন ISRO-র বিজ্ঞানীরা। ১৪০ কোটি দেশবাসী আপ্লুত। হৃদয় দিয়ে এই গবেষকদের আলিঙ্গন করছেন তাঁরা।কিন্তু, যাঁদের জন্য এই সাফল্য পেল ভারত, তাঁদের কেউ লাখপতি বা কোটিপতি নন? সামান্য বেতনেই তাঁরা দিব্যি কাজ করছেন এবং হৃদয় দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন, এমনটাই জানালেন ISRO-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান জি মাধবন নায়ার।উন্নত বিশ্বের বিজ্ঞানীরা যে বেতন পান তাঁর একের পাঁচ ভাগ অর্থাৎ অনেকটা কম পারিশ্রমিক পেয়েও চন্দ্রযান ৩ সফল করে দেখিয়েছে ISRO-র বিজ্ঞানীরা। তিনি আরও জানান, ISRO-র গবেষকদের বেতন কম বলেই এত কম খরচে যে কোনও মহাকাশ মিশন করা সম্ভব হয়।
ISRO-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান বলেন, “বিশ্বে গবেষকদের যে অঙ্ক দেওয়া হয় পারিশ্রমিক বাবদ ISRO-র গবেষক, টেকনিশিয়ানরা তাঁর একের পাঁচ শতাংশ পান। এটি একটি বড় সুবিধা।” তিনি আরও বলেন, “ISRO-র গবেষকদের মধ্যে কেউ মিলেনিয়ার নন। তাঁরা খুবই সাধারণ জীবনযাপন করে থাকেন।তাঁর কথায়, “ISRO-র বিজ্ঞানীরা তোয়াক্কা করেন না যে তাঁরা কত টাকা বেতন পাচ্ছেন। তাঁরা কাজের বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন এবং আবেগ দিয়ে কাজটা করেন। আর তাই এই ধরনের মাইলস্টোন আমরা ছুঁতে পারছি।”স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এবং গ্রহ পর্যবেক্ষণ সহ এর অনেক প্রকল্প এবং মিশনের জন্য গবেষণা, উন্নয়ন, প্রয়োগ এবং সম্পাদন পরিচালনার জন্য ISRO বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ করে। ISRO বিভিন্ন পদে থাকা বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়াররা সরকারি স্কেলে বেতন ও ভাতা পান।কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা গঠিত বেতন কমিশন অনুযায়ী তাঁদের বেতন ঠিক করা হয়।
ISRO-তে বিভিন্ন পদে থাকা কর্মরত বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীদের বেতন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। পদোন্নতি পাওয়ার পরে বেসিক স্যালারি বাড়তে থাকে।সাধারণত, বেতন ম্যাট্রিক্সের লেভেল ১০-এ বিজ্ঞানীদের ‘SC’ হিসাবে নিয়োগ করা হয়। প্রতি মাসে ৫৬, ১০০ টাকা ন্যূনতম মূল বেতন দেওয়া হয়।এর উপরে কিছু ভাতাও দেওয়া হয়। সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে অনুমোদিত বিভিন্ন ভাতা ও সুযোগ-সুবিধাও তাদের দেওয়া হয়। ৭ম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার পরে, ISRO বিজ্ঞানীদের বেতনের কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। পে ব্যান্ড এবং গ্রেড পে-এর সমন্বয়ে যা তৈরি করা হয়, তাকে বেসিক পে বলা হবে।ISRO-তে কর্মরতরা মূল বেতনের পাশাপাশি ডিএ পান। বছরে দুবার বাড়নো হয়।
বেতন স্কেল ছাড়াও, তাঁরা বাড়ি ভাড়া ভাতাও পান যা, মূল বেতনের ১০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে হয়।এর পাশাপাশি তাঁরা পরিবহন ভাতা পান। তবে এটি পোস্টিং এর গ্রেড পে এবং স্টেশনের উপর নির্ভর করে। এগুলি ছাড়াও চিকিৎসা সুবিধা, বাড়ি তৈরির জন্য অগ্রিম, গ্রুপ বীমা, ভর্তুকিযুক্ত ক্যান্টিন ইত্যাদি পান নায়ারের কথায়, “আমরা একের পর এক প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছি। পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকলের জন্য ৩০ বছর আগে আমরা যে ইঞ্জিন ব্যবহার করেছিলাম তাই GSLV-তেও ব্যবহার করা হয়েছে।”পাশাপাশি দেশীয় প্রযুক্তির উপর জোর দিচ্ছে ভারত, এমনটাও জানান এই বিশেষজ্ঞ। অন্যান্য দেশের মহাকাশ মিশনের থেকে ভারতের মিশনগুলি খরচের নিরিখে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কম, জানান এই বিশেষজ্ঞ। পাশাপাশি এই বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে যে নাসার তুলনায় অনেকটাই কম ইসরোর বিজ্ঞানীদের বেতন।
চন্দ্রযানের সাফল্যের পর ভারতের মহাকাশ গবেষণায় যে বড় বদল আসতে চলেছে এবং বাণিজ্যিক বিনিযোগ বাড়তে চলেছে তা জানিয়েছেন প্রাক্তন ISRO চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “বিশ্বে আমাদের দেশীয় প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে চলেছে। যেমন আমাদের মহাকাশযান, রকেট ইত্যাদি। আগামীদিনে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারত আরও বড় সাফল্য পাবে।” তাৎপর্যপূর্ণভাবে, চন্দ্রযান ৩ মিশনের খরচ ছিল মাত্র ৬১৫ কোটি টাকা, যা কিছু মেগাবাজেট বলিউড ছবির থেকেও কম। ইতিহাস গড়েছে ভারত। এই প্রথম কোনও মহাকাশযান চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করেছে। চাঁদে নেমে কাজ শুরু করেছে রোভার প্রজ্ঞানও।