বাবা অসুস্থ হওয়ায় চালাতেন সেলুন,সেই মেয়েই কঠোর লড়াই করে যা করে দেখালো,স্যালুট নেটিজেনদের

আজকের পরিবর্তিত সময়ে কন্যারা কোন ক্ষেত্রেই পুত্রের চেয়ে কম নয়। এমনকি পুরুষশাসিত ক্ষেত্রেও কন্যারা পুরুষদের সাথে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রমাণ করছে যে তারা প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করতে সক্ষম । আর এরকমই একজন লড়াকু মেয়ের গল্প আজকে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো যে কঠোর লড়াই করে জীবনে এমন একটা পরিস্থিতিতে এসেছে যেখানে তাকে স্যালুট জানাচ্ছে সারা এলাকা। মেয়েটির নাম বিন্দুপ্রিয়া, সে হায়দ্রাবাদের ভদ্রদি কোঠাগুদাম জেলায় অবস্থিত মন্ডিকুন্তা গ্রামের বাসিন্দা।

সে বিবিএ নিয়ে পড়াশোনা করেছে। কিন্তু শুধুমাত্র পড়াশোনা করে সে থেমে নেই, কঠোর লড়াই করে জীবনে সে যা করে দেখালো জানলে রীতিমতো বা কোথায়। বিন্দুপ্রিয়ার তিন বোন আছে যার মধ্যে তিনি সবার ছোট। তার বাবা একটি সেলুনের দোকান চালাতেন এবং সেখান থেকে আয় দিয়ে তার পরিবারের ভরণপোষণ চলতো।বিন্দুপ্রিয়ার বাবা সেলুনে কাজ করার আগে পর্যন্ত বাড়ির অবস্থা ভালো ছিল, কিন্তু 2015 সালে যখন তিনি ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, তখন তার পরিবারের অবস্থা সম্পূর্ণ বদলে যায়। ব্রেন স্ট্রোকের কারণে তার অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়ে এবং চিকিৎসক তাকে বিশ্রামের পরামর্শ দেন। বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে কয়েকদিন দোকান বন্ধ থাকলেও বেশিদিন বন্ধ রাখলে খাবে কি।তাই বিন্দুপ্রিয়া বাড়ির পরিস্থিতির কারণে আজ তিনি তার বাবার সেলুনের দেখাশোনা করেন। কিন্তু তার মনে সব সময় ছিল সে জীবনে কিছু করতে চাই, আর সেখান থেকে শুরু করে নতুন করে পড়াশোনা।

```

মাত্র 11 বছর বয়সে সেলুনের কাজ শিখেছেন, যেহেতু তার বাবা সেলুনের দোকান চালাতেন, তাই বিন্দুপ্রিয়া প্রায়ই তার জন্য দুপুরের খাবার নিতেন। সেই সময়, তিনি তার বাবাকে চুল কাটা এবং শেভ করতে দেখতেন এবং এইভাবে তিনি মাত্র 11 বছর বয়সে এই কাজটি শিখেছিলেন। এত অল্প বয়সে এই কাজ শেখা বিন্দুপ্রিয়াকে সাহায্য করেছে তার পরিবারকে দুবেলা দুমুঠো খাবার পেতে। বাবার খারাপ অবস্থার কারণে তিনি নিজেই দোকানটি চালানো শুরু করেন।বিন্দুপ্রিয়া বলেছেন যে বাড়ির অবস্থার উন্নতির জন্য, তিনি মাত্র 12 বছর বয়সে নিজেই দোকানটি পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং সকালে তার বাবার দোকান খোলেন। এরপর কাঁচি আর ক্ষুর সবই তার অস্ত্রে পরিণত হয় এবং সে দোকানে আসা লোকজনের চুল দাড়ি কাটতে শুরু করে।

সারাদিন দোকানে পরিশ্রম করে বাড়ি ফেরার পর তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে ভীষণভাবে পড়াশোনা করেন, শুধু তাই নয় যে মুহূর্তে দোকানে কোন কাস্টমার থাকতো না তখন তিনি বই নিয়ে বসে পড়তেছেন এবং নিজের স্বপ্নকে সত্যি করার চেষ্টা করতেন। তার স্বপ্ন ছিল আইএএস অফিসার হওয়া। কঠোর পরিশ্রম করে সারাদিন সেলুন চালিয়ে অবশেষে তিনি সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আইএএস অফিসার হওয়ার পর গর্ভে ভরে ওঠে তার বাবা মায়ের বুক। তার এই পরিশ্রমকে কুর্নিশ জানাই এলাকার লোকজন। তবে বিন্দুপ্রিয়ার জন্য এই পথ সহজ ছিল না কারণ সমাজে এই সেলুট চালানোর কাজটিকে পুরুষদের বলে মনে করা হয়। যখনই সে দোকানে খদ্দেরদের চুল কাটত বা কামিয়ে দিত, তখনই তার আশেপাশের লোকজন এবং তার পরিচিতরা তার বিরোধিতা করতে থাকে। শুধু তাই নয়, দোকানে আসা লোকজনও তাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করতো । বিন্দুপ্রিয়া মানুষের এসব অর্থহীন কথাবার্তা উপেক্ষা করে নিজের কাজে ব্যস্ত থাকেন।

```

বিন্দুপ্রিয়ার বাবার স্বাস্থ্য এখনও ভালো না, তাই দোকান চালানোর জন্য তিনি লোক রেখেছেন কারণ তিনি মনে করেন এই দোকান অসময়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছে তার পরিবারের পেটে অন্য তুলে দিয়েছে। গত বছর তার মা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন চিরতরে। তার বড় বোন বিবাহিত এবং তার ছোট বোন তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করছে। রবিবার বা অন্য যে কোনও ছুটির দিনে, বিন্দুপ্রিয়া সকাল 9 টা থেকে সন্ধ্যা 6:30 পর্যন্ত তার দোকান খোলে। বিন্দুপ্রিয়া, যিনি সেলুনের দোকান চালিয়ে তার পরিবারকে সমর্থন করেন, তিনি পড়াশোনা শেষে আইএএস অফিসার হয়েছেন।সত্যিই বিন্দুপ্রিয়া মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার চেয়ে কম নয়।