ট্রেনের কামরায় গুটিসুটি মেরে বসে কিশোর,কিছু একটা ঘটিয়েছে,টিটিই প্রশ্ন করতেই পর্দাফাঁস

তখন ট্রেন জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে ঢুকবে। টিকিট পরীক্ষকের নজরে আসে ওই কিশোর। দেখে সন্দেহ হতেই নানা প্রশ্ন করে। থতমত খেয়ে সে সবটা বলেও দেয়। জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন আসা মাত্রই আরপিএফ’র হাতে ওই কিশোরকে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু সে কিভাবে সেখানে এলো? আর কি ছিল তার মনে? তার গল্প শুনলে অবাক হতে হয়।

বাবা, মা দামী চশমা কিনে দিয়েছিলেন ছেলেকে। কিন্তু ছেলে তা হারিয়ে ফেলায় বকাবকি করেন তাঁরা। ওই কিশোরের দাবি, বাবা, মা দু’জনই তাকে ঝাঁটা, জুতো দিয়ে মারধর করে। এরপরই অভিমানে বাড়ির ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে। সেইমতো বেরিয়েও যায়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পায়ে হেঁটে পৌঁছয় অসমের নিউ বঙ্গাইগাঁও স্টেশনে। সেখান থেকে ট্রেনে চাপে। কিন্তু জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে ঢোকার মুখে এক টিকিট পরীক্ষকের সন্দেহ হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদ করতেই জানতে পারেন, বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে ওই কিশোর। এরপরই রেল পুলিশের উদ্যোগে তাকে বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়।

```

ওই কিশোরের কথায়, “চশমা ছাড়া আমার দেখতে অসুবিধা হয়। স্কুলে চশমাটা হারিয়ে যায়। বাড়িতে আসতেই মা, বাবা খুব বকাবকি করে। বলেছিল, এত দামী চশমা কেন হারালাম? জুতো দিয়ে, ঝাঁটা দিয়ে আমাকে মারেও। আমার খুব কষ্ট হয়েছিল। দুপুরে মা বসে মোবাইল দেখছিল, সেই সময় আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে যাই।”ওই কিশোরের বাবার কথায়, “বাবা মা কি কখনও খারাপের জন্য বকাবকি করে? ওর ভালর জন্যই তো বলি। আসলে বারবার তো এত দাম দিয়ে চশমা কিনে দেওয়া সম্ভব নয়, তাই একটু বকেছিলাম। ও হয়ত ভুল বুঝে এমনটা করে ফেলেছে। আমি বাড়ি ছিলাম না। ওর মা একা ছিল। সেই সুযোগেই বেরিয়ে যায়।”

অসমের চিরাং জেলার সাফাগুড়ি অঞ্চলের বাসিন্দা ওই কিশোরের বাবা একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তাঁর এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। ওই কিশোর জানায়, তার চোখের সমস্যা। সম্প্রতি ডাক্তার দেখানোয় চশমা নেওয়ার পরামর্শ দেয়। বাবা বেশ খরচ করেই ছেলেকে চশমা বানিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ওই ছেলে সম্প্রতি স্কুলে চশমাটি হারিয়ে ফেলে।এদিকে ছেলে বাড়ি ফিরতেই মা, বাবা জানতে চান চশমা কোথায়।

```

অভিযোগ, তা হারিয়ে যাওয়ার কথা বলতেই ছেলেকে কড়া কথা শোনান মা, বাবা। এমনকী হাতে কাছে থাকা জুতো, ঝাঁটা তুলে নিয়ে ছেলেকে মারধর করেন। সেই সময় মুখ বুজে সবটা সহ্য করে নিয়েছিল ওই কিশোর। কিন্তু এরপরই ঠিক করে বাড়ি ছাড়বে সে। রবিবার বাড়ি ছাড়ে। ওই কিশোরের বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে রেল স্টেশন। এদিকে তার কাছে টাকা পয়সাও কিছু ছিল না। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা হেঁটে নিউ বঙ্গাইগাঁও স্টেশনে পৌঁছয় সে। এরপরই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনে উঠে পড়ে। রেল পুলিশ জলপাইগুড়ি চাইল্ড লাইনে ফোন করে কিশোরকে তাদের হাতে তুলে দেয়। এরপর চাইল্ড লাইনের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ফোন মারফত খবর দেওয়া হয় তার বাড়িতে। সোমবার জলপাইগুড়ি আসেন বাবা। তিনিই ফিরিয়ে নিয়ে যান ছেলেকে।