কঠোর পরিশ্রম করে মানুষের সাফল্যের কথা তো প্রায়েই খবরে শোনা যায়। আজ আমরা আপনাদের এমন এক ব্যক্তির সাফল্যের গল্প বলতে যাচ্ছি যিনি একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু এই ব্যক্তি তার কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠা দিয়ে আগামী প্রজন্মের জন্য কোটি কোটি টাকার সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। আমরা কর্ণাটকের পুত্তুর এলাকার মুলকি গ্রামের বাসিন্দা রঘুনন্দন শ্রীনিবাসের কথা বলছি। তিনি একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ফলমূল ও শুকনো কাঠ বিক্রি করে সংসার চালাতেন। খুব পরিশ্রম করে তার বাবা ৭ সন্তান ও তার পরিবারকে খাওয়াতেন।
ব্যবসার শুরু
তার বাবা ছিলেন একজন ফল বিক্রেতা। যার জন্য ছোটবেলা থেকেই যে কোনো ফলের স্বাদের আন্দাজ ছিল তার। সময়ের সাথে সাথে, তার অন্যান্য ভাইরা বড় হয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কাজ করা শুরু করে। ১৯৬৬ সালে, আরএস কামাত তার পরিবারের দায়িত্ব পালনের জন্য অর্থ উপার্জনের তাগিদে মুম্বাইতে তার ভাইদের বাড়িতেও যান। আরএস কামাতের ভাই মুম্বাইয়ে একটি ধাবা চালাতেন। তার ভাইরা তাকে সেখানে কাজে লাগায়। এখানে কামাত আইসক্রিম ব্যবসায় মুগ্ধ হন এবং তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি এই ব্যবসাতেও নিজের পরিচয় তৈরি করবেন। কিছু সময় পরে আরএস কামাত আইসক্রিম ব্যবসা পুরোপুরি শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন।
জুহু তটে প্রথম আউটলেট উদ্বোধন।
এই সিদ্ধান্ত খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এই কাজ শুরু করার সময় অনেক আইসক্রিম ব্র্যান্ড বাজারে আলাদা পরিচিতি তৈরি করেছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও আরএস কামাত এই ঝুঁকি নিয়ে শুরু করেন আইসক্রিমের ব্যবসা। আরএস কামাত ন্যাচারাল আইসক্রিম নামে মুম্বাইয়ের জুহুতে প্রথম আউটলেট শুরু করেন। ১৯৮৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি এই কাজ শুরু করেন। তাদের তৈরি আইসক্রিমের বিশেষত্ব ছিল তারা প্রাকৃতিক উপায়ে আইসক্রিম তৈরি করত। তার আউটলেট জুহুতে অবস্থিত ছিল কিন্তু সে সময় তার আইসক্রিম পার্লারে খুব বেশি লোক আসত না। এই জন্য, আরএস কামাত তার আইসক্রিমের সাথে মশলাদার পাও ভাজি তৈরি করতে শুরু করেছিলেন।
আইসক্রীমে দেশি স্বাদ
এরপর তার আইসক্রিম পার্লারেও ভিড় লেগে যায়। একদিকে লোকেরা মশলাদার পাওভাজি খেতেন আবার অন্যদিকে তার ঠান্ডা এবং মিষ্টি আইসক্রিম মানুষকে মুগ্ধ করত। এখানে ফল, দুধ ও চিনি দিয়ে আইসক্রিম তৈরি করা হতো। ধীরে ধীরে গ্রাহকরা তাদের চিনতে শুরু করে এবং অন্যদিকের ভেজাল আইসক্রিমের বাদ দিয়ে এই আইসক্রিমের কদর আরও বেশি বাড়তে লাগে। প্রাথমিক দিনগুলিতে, আরএস কামাত আম, চকলেট, সীতাফল এবং স্ট্রবেরির মতো ৫ টি স্বাদের আইসক্রিম তৈরি করতে শুরু করেছিলেন। তার কাজ সফল হয় মাত্র ১ বছর পরে এবং তার পরে তিনি পাও ভাজির কাজ বন্ধ করে ন্যাচারাল আইসক্রিম পার্লার শুরু করেন।
এই কয়দিনে তার আইসক্রিমের অভ্যর্থনা এমনভাবে মানুষের মুখে মুখে পৌঁছেছিল যে মানুষ এখানে শুধু আইসক্রিম খেতে আসতে শুরু করে এবং তার আইসক্রিম পার্লারের বাইরে মানুষের ভিড় জমতে শুরু হয়। গ্রাহকদের সাহায্যে বর্ধিত আরএস কামাতের এই ব্যবসাকে বড় এবং কার্যকর কিছু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাজারে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়া তাদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে, আরএস কামাত তার গ্রাহকদের সাথে আলাপচারিতা করেছেন এবং আরও শিখেছেন যে তাদের পাঁচটি দেশীয় স্বাদ ছাড়াও বাজারে আরও অনেক বিদেশী স্বাদের আইসক্রিম পাওয়া যায়। এই তথ্য পাওয়ার পর, তিনি তার আইসক্রিমের স্বাদে কাঁঠাল, কাঁচা নারকেল এবং কালো জামও যোগ করেন।
এই স্বাদগুলি তৈরি করতে, আরএস কামাত নিজের বিশেষ মেশিনও তৈরি করেছিলেন। তিনি নিজেই এই মেশিনগুলি তার প্রয়োজন অনুসারে ডিজাইন করেছেন। আরএস কামাত (ন্যাচারাল আইসক্রিম) দ্বারা শুরু করা আইসক্রিম কোম্পানিটি বর্তমানে অনেক উন্নতি করেছে। ন্যাচারাল কোম্পানির আইসক্রিমের স্বাদ শুধু জুহুতেই সীমাবদ্ধ নয়, ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। বর্তমানে সারা দেশে ন্যাচারাল কোম্পানির ১৩৫টি আউটলেট রয়েছে। এছাড়াও শীঘ্রই দিল্লিতে ন্যাচারাল আইসক্রিমের ১০০টি দোকান শুরু হতে চলেছে। পাঁচটি ফ্লেভার দিয়ে শুরু করা, ন্যাচারাল কোম্পানি আজ ২০টি স্বাদের আইসক্রিম তৈরি করে। একজন দরিদ্র ফল বিক্রেতার ছেলে তার কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার জোরে আজ ৩০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে।