রীতিমতো জ্যাকপট ভারতের। এক সংস্থার বিজ্ঞানীরা একটি সমীক্ষা চালাচ্ছিলেন সায়ানাইটের মতো অ-প্রথাগত পাথর নিয়ে। সেই সময়ই আচমকা তারা ওই খনিজ পদার্থগুলির সন্ধান পান। পদার্থগুলির মধ্যে রয়েছে অ্যালানাইট, থোরাইট, জিরকনের নানা উপাদান। বিজ্ঞানীরা এই আবিষ্কার সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, এই খনিজ পদার্থগুলি শক্তি, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ ও স্থায়ী চুম্বক নির্মাণের মতো নানা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই স্থায়ী চুম্বক টার্বাইন, জেট এয়ারক্র্যাফট ও আরও নানা বস্তুতে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া আরইই ব্যবহৃত হয় উচ্চ পর্যায়ের প্রযুক্তিতে। ফলে বিপুল পরিমাণে আরইই’র সন্ধান পেয়ে উচ্ছ্বসিত দেশের বিজ্ঞানী মহল। কিন্তু কোথায় পাওয়া গেল এই পদার্থ গুলি?
অন্ধ্রপ্রদেশের (Andhra Pradesh) অনন্তপুর জেলায় মিলল ১৫ ধরনের ‘পৃথিবীর দুর্লভ উপাদান’ তথা আরইই’র (REE) সন্ধান। উল্লেখ্য, এই আরইই সেলফোন, টেলিভিশন, কম্পিউটারের মতো বহু ইলেকট্রনিক যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়। হায়দরাবাদের ‘ন্যাশনাল জিওফিজিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ তথা এনজিআরআই এবার অনন্তপুরে পেলেন আরইই’র সন্ধান। অ্যাক্টিনাইড (IUPAC nomenclature) হল ১৫টি মৌলিক পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত পর্যায় সারণির একটি বিশেষ শ্রেণি। ৮৯ থেকে ১০৩ পারমাণবিক সংখ্যা বিশিষ্ট মৌলগুলো এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। অ্যাক্টিনিয়াম থেকে লরেনসিয়াম পর্যন্ত মৌলগুলোকে অ্যাক্টিনাইড মৌল বলা হয়। এরা সাধারণত তেজস্ক্রিয় মৌল।
দেশের মধ্যে প্রথম লিথিয়াম খনির সন্ধান মিলেছে জম্মু ও কাশ্মীরে। সেখানে ৫৯ লক্ষ টন লিথিয়াম আছে বলে অনুমান। সাধারণ রেয়ার আর্থ এলিমেন্টের জন্য বিদেশের উপরেই বেশি নির্ভর করতে হয় ভারতকে। অনন্তপুরে ল্য়ান্থানাইড ও অ্যাক্টিনাইড শ্রেণির ধাতব উপাানগুলো খোঁজ পেয়ে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত বিজ্ঞানী মহল। এরপর বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরি থেকে অস্ত্রশস্ত্র তৈরি–কোনও কিছুর জন্যই আর বিদেশের উপর নির্ভরশীল হতে হবে না বলেই আশা বিজ্ঞানীদের।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে খনিজগুলোর সন্ধান মিলেছে তারা পর্যায় সারণিতে (Periodic Table) ল্যান্থানাইড ও অ্যাক্টিনাইড সিরিজের মধ্যে পড়ে। ল্যান্থানাইড বা ল্যান্থানয়েড (IUPAC নামকরণ) হল ১৫টি ধাতব মৌলিক পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত পর্যায় সারণির একটি বিশেষ শ্রেণি। ৫৭ থেকে ৭১ পারমাণবিক সংখ্যা বিশিষ্ট মৌলগুলো এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এই শ্রেণীর প্রথম মৌলটি হল ল্যান্থানাম এবং শেষ মৌলটি হল লুটেসিয়াম। ল্যান্থানাইডগুলি ধাতব উপাদান। তারা আর্দ্র বাতাসে অক্সিডাইজড হয়। দ্রুত অ্যাসিডে দ্রবীভূত হয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে ফেব্রুয়ারিতে জানা গিয়েছিল, দেশের মধ্যে প্রথম লিথিয়াম খনির সন্ধান মিলেছে জম্মু ও কাশ্মীরে। মোট ৫৯ লক্ষ টন লিথিয়াম ওখানে রয়েছে বলে অনুমান। ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারি তৈরিতেই মূলত ব্যবহৃত হয় লিথিয়াম। এযাবৎকাল লিথিয়ামের জন্য বিদেশ থেকে আমদানির উপরই ভরসা করতে হত ভারতকে। তাই দেশেই লিথিয়ামের সন্ধান মেলায় তা দেশের অর্থনীতির জন্য উপকারী হবে বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের। এবার দু’মাসের মধ্যেই REE মিলল অন্ধ্রপ্রদেশে।