মা চাকরি করেন অঙ্গনওয়াড়িতে, ছেলে যা করে দেখালেন, স্যালুট নেটিজেনদের

মা চাকরি করেন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রান্তিক পরিবারের শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির বিষয়ে নজর রাখেন।নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেটি ছেলেবেলা থেকেই মেধাবী। বাবা কৃষক। পারিবারিক আয় মেরেকেটে মাসে ১৮-২০ হাজার টাকা। সব ঠিক থাকলে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ওই পরিবারেরই বার্ষিক আয় পৌঁছবে দু’কোটিতে।

সৌজন্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ার গুগল এবং ফেসবুক থেকে চাকরির অফার। রামপুরহাটের বিশাখ মণ্ডল এখনও ঠিক করতে পারেননি কোন চাকরিটা নেবেন। তবে ঝোঁক ফেসবুকেই। জয়েনিং সেই লন্ডনে।যাদবপুরেও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে টপার। পড়ার শেষে প্লেসমেন্ট অফারের দিক থেকেও বিশ্ববিদ্যালয়ে টপার। এর আগে জনা দশ পড়ুয়া বার্ষিক এক কোটি টাকা বেতনের চাকরি পেয়েছিলেন। বিশাখের ক্ষেত্রে অঙ্ক প্রায় দ্বিগুণ। সহউপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ”এটা আমাদের গর্বের মুহূর্ত। মুখ উজ্জ্বল করেছে বিশাখ। আমাদের পড়ুয়ারা যে সেরা আইআইটির থেকে পিছিয়ে নেই, এটা তারই প্রমাণ।”

```

বিশাখ এবং তাঁর মা শিবানী কৃতজ্ঞ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে। কারণ নামমাত্র টাকায় দেশের সেরা এই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে পেরেছেন বিশাখ। চাকরি-প্রাপ্তিতে যাদবপুরের শিক্ষক, প্লেসমেন্ট সেলের অধিকর্তা এবং বন্ধুদের সহায়তাও ভুলছেন না এই তরুণ।মা-বাবার, বিশেষ করে মায়ের লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে বিশাখ বলেন, ”ছেলেবেলা থেকে দেখছি মা কত কষ্ট করছে। আমাকে কখনও মা বলেনি বড় চাকরি পেতে হবে। সব সময় বলেছে বড় মানুষ হতে। সেটাই আমার লক্ষ্য।” আর তাঁর মা’র কথায়, ”আমরা কৃতজ্ঞ দিদির (মুখ্যমন্ত্রী) কাছেও। কারণ ছেলে যদি বিবেকানন্দ স্কলারশিপের টাকা না পেত তা হলে ওকে এত দূরে কলকাতায় রেখে পড়াতে পারতাম না।”

তবে করোনার পরে জীবনধারণ আরও শক্ত হওয়ায় গত এক বছর ধরে পড়াশোনার পাশাপাশি চারটি কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপও করতে হয়েছে ছেলেটিকে।লড়াই করে এগোনোর এই অতীতটা, শিকড়টাকে ভুলতে চান না বিশাখ। লন্ডনে একটু থিতু হয়ে নিয়ে যেতে চায় মাকে। আর শিবানী বলেন, ”ছোটবেলা থেকে আমি জানতাম ছেলের মধ্যে একটা আলো আছে। সেই কারণে অনেকের সঙ্গে আমার তর্কও হয়েছে। কিন্তু ছেলের কোনও অসুবিধে হতে দিইনি।” শিবানীর লড়াইয়ে পাশে ছিলেন তাঁর মাও। গত নভেম্বরে প্রয়াত হয়েছেন। এটাই দুঃখ যে বিশাখের ভালোবাসার ‘দিদুন’ এত বড় খবরটা জেনে যেতে পারলেন না। ছেলে বড় চাকরি পেলেও শিবানী আইসিডিএসের চাকরি ছাড়তে চান না।

```

তাঁর কথায়, ”এটা আমার স্বাধীনতা। নিজের পায়েই দাঁড়াতে চাই। এই চাকরিটা আমার কাছে সেবা।” বিশাখের এই খুশিতে উচ্ছ্বসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লেসমেন্ট সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক শমিতা ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ”ওঁরা এগিয়ে গেলেই আমাদের সাফল্য।”