আর্থিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়েও নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন, সাফল্য এনেছেন, খুঁজলে এ দেশে এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে। তেমনই এক কিশোরের কাহিনি যা গোটা দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার আরও একটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হিসাবে উঠে এসেছে। নাম বরুণ বরনওয়ালা। মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলার ছোট শহর বইসারের বাসিন্দা। শৈশব থেকেই বরুণের স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবেন। গরিব মানুষের সেবা করবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাঁর। তবে থেমে থাকেননি। এক লক্ষ্য পূরণ না হলে কী হবে, অন্য লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে গিয়েছেন বরুণ।
সাইকেলের দোকান চালাতেন বরুণের বাবা।
বরুণের জীবনের এই সফরও কিন্তু খুব একটা মসৃণ ছিল না। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠেছেন বরুণ। তাঁদের একটা সাইকেলের দোকান ছিল। সেই দোকান চালাতেন বরুণের বাবা।পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন বরুণের বাবা। সাইকেল সারিয়ে যে টাকা উপার্জন করতেন, তাতে কোনও রকমে সংসার চলত। অর্থাৎ আর্থিক অনটন ছিল তাঁদের নিত্যদিনের সঙ্গী। শৈশব থেকেই পড়াশোনায় ভাল ছিলেন বরুণ। কিন্তু তাঁর জীবনে অন্ধকার নেমে আসে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়। হঠাৎই তাঁর বাবার মৃত্যু হয়।
গোটা সংসার তখন অথৈ জলে। কী ভাবে সংসার চলবে তা নিয়ে যখন দিশাহারা বরুণের মা, নিজেই সংসারের জোয়াল কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বরুণ। সংসার চালানোর জন্য বাবার সাইকেলের দোকানে বসা শুরু করেন বরুণ। স্থির করেন, পড়াশোনা বন্ধ করে দেবেন। ছেলের মনের কথা মা বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু ছেলের পড়াশোনা বন্ধ হোক এটা চাইছিলেন না বরুণের মা। তিনি বরুণকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলেন। নিজেই দোকানে বসা শুরু করেন।
ইতিমধ্যেই বরুণের দশমের বোর্ড পরীক্ষার ফল বেরোয়। তাতে বরুণ প্রথম হয়েছিলেন। কিন্তু বাবার আচমকা মৃত্যু যেন তাঁকে ভিতর থেকে ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু ছেলেকে সমানে উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছেন মা। পড়াশোনার পাশাপাশি সাইকেলের দোকানও চালাতেন বরুণ। তাঁর দিদি টিউশন পড়াতেন। এ ভাবেই সংসার চলছিল। ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছা ছিল বরুণের। কিন্তু এত টাকা পাবেন কোথায়?
ঠিক সেই সময় ত্রাতা হিসেবে হাজির হলেন বরুণের বাবার বন্ধু চিকিৎসক কাম্পলি। ১০ হাজার টাকা কলেজের ফি দিয়ে বরুণকে ভর্তি করিয়ে দেন তিনি। কিন্তু ডাক্তারি পড়ার যে বিপুল খরচ তা কোনও ভাবেই জোগাড় করা সম্ভব নয়, এটা বুঝেই মেডিক্যালের পড়া মাঝপথেই ছেড়ে দেন।
ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন অধরা থেকে যায় বরুণের। তবে হাল ছাড়েননি। পুণের এমআইটি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন। সেই ভর্তির টাকা জোগাড় করে দিয়েছিলেন বরুণের বন্ধুরাই। প্রথম সিমেস্টারে কলেজের মধ্যে সেরা হওয়ায় স্কলারশিপ পেয়েছিলেন বরুণ। সেই স্কলারশিপের টাকা দিয়েই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করেন বরুণ। তাঁর এই কঠিন সময়ের সঙ্গী ছিলেন বন্ধুরা। বই কেনা হোক, বা টিউশন তাঁরা সকলে মিলে বরুণের সেই টাকা দিয়েছিলেন।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করে বরুণ একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরি শুরু করেন। আর এখান থেকেই বরুণের জীবন মোড় নেয়। বরুণ স্থির করেন ইউপিএসি পরীক্ষায় বসবেন। কিন্তু তাঁর পরিবার চাইত যে, বরুণ ওই আন্তর্জাতিক সংস্থাতেই কাজ করুন। কিন্তু নিজের ইচ্ছাকেই সায় দিয়েছেন তিনি।একটি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় ইউপিএসসি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন বরুণ। ওই সংস্থা তাঁকে এই পরীক্ষা সংক্রান্ত বই দিয়ে সাহায্য করত। দিনরাত এক করে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকেন তিনি। ২০১৬-তে প্রথম চেষ্টাতেই ইউপিএসসি পরীক্ষায় পাশ করেন বরুণ। তাঁর রেংক ছিল ৩২। বর্তমানে বরুণ গুজরাতে কর্মরত।