আশি অবধি আয়ু (Anti-Aging) থাকলে আসতেই হবে। চুল পেকে যাবে, চামড়া কুঁচকে যাবে, হাত-পায়ে শিরা উঠে শীর্ণ-জীর্ণ ত্বক হবে, দাঁত পড়ে যাবে…যৌবনের ঝলমলে দিন চলে গিয়ে বার্ধক্য এসে যাবে হঠাৎ করেই। পুরানের গল্পের যযাতি জরা দান করে বৃদ্ধ থেকে জোয়ান হয়েছিলেন। তাঁর গোটা শরীর একেবারে ট্রান্সফর্ম হয়ে গিয়েছিল। থুরথুরে বুড়ো থেকে চনমনে যুবক হওয়ার এই জার্নিটা কীভাবে হয়েছিল তা পুরানে রহস্যই রাখা হয়েছে। জাদু মন্ত্রবলে তো আর সব সম্ভব হয় না। আসল ব্যাপারটা কী ঘটেছিল তারই খোঁজে আছেন বিজ্ঞানীরা।
এই যে বুড়ো কোষ একেবারে ভোল পাল্টে ফেলছে (Anti-Aging) , পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠছে সে নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিশাল গবেষণা চলছে। ‘অ্যান্টি-এজিং’, মানে হল বয়স ধরে রাখা বা প্রকৃতির নিয়মকে ফাঁকি দিয়ে শরীরের বয়স কমিয়ে দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে বিরাট কর্মযজ্ঞ চলছে। ‘সায়েন্স’ জার্নালে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এমন এক খোঁজের কথা লিখেছেন যা হইচই ফেলে দিয়েছে বিশ্বে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী বিজয় যাদব বলছেন, এমন এক ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে যা বয়স ধরে রাখতে পারে। ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানী। এই অ্যামাইনো অ্যাসিডের নাম টরিন (Taurine)। বিজ্ঞানীর দাবি, এই অ্যামাইনো অ্যাসিড কোষের ডিএনএ-র নষ্ট হয়ে যাওয়া (DNA damage) ঠেকায়, টেলোমারেজকে তাজা রাখা বহুদিন।
মানুষ বুড়ো হয় কারণ শরীরের কোষ-কলাগুলোর কার্যক্ষমতা কমতে শুরু করে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বয়স বেড়ে যায়। শরীরে তার ছাপ পড়তে শুরু করে। যদি এই প্রক্রিয়াটাকেই ঘুরিয়ে দেওয়া যায় (Anti-Aging) , তাহলেই বাজিমাত হয়ে যাবে। আর এই কাজটাই নাকি করতে পারবে ওই অ্যামাইনো অ্যাসিড। গবেষক বিজয় যাদব দাবি করেছেন, ইউরোপে ১২ হাজার জনের উপর এই পরীক্ষা করা হয়েছে। দেখা গেছে ষাটোর্ধ্ব যাঁদের শরীরে টরিন অ্যামাইনো অ্যাসিডের মাত্রা বেশি তাঁরা ষাটের পরেও অনেক বেশি সুস্থ ও তরতাজা। এঁদের দেখলে বয়স বোঝা যায় না চট করে। খুব কম জনই আছেন যাঁরা টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা ওবেসিটির শিকার। বাকিদের একেবারেই নীরোগ ও প্রাণবন্ত।
বেশিদিন বেঁচে থাকার বাসনা কমবেশি সব মানুষেরই আছে। সমুদ্র মন্থন করে দেবতারাই যে শুধু অমৃতকুম্ভের সন্ধান করেছিলেন তা নয়, মানুষও যুগ যুগ ধরে সেই অমৃতেরই খোঁজ করে চলেছে। আয়ু বৃদ্ধি কীভাবে হবে সে নিয়ে খোঁজ-গবেষণা দীর্ঘ বছরের। একই সঙ্গে বুড়ো শরীরকে ফের তারুণ্যের স্বাদ দেওয়ার গবেষণাও চলছে। অ্যান্টি-এজিং নিয়ে বিজ্ঞানীদের একের পর এক গবেষণা তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। বিজ্ঞানী বলছেন, আমাদের বংশগতির ধারক ডিএনএ-র মধ্যেই যাবতীয় গোপন সংকেত লুকনো থাকে। কোষ কখন কার্যক্ষম থাকবে, কতদিন পরে কার্যক্ষমতা হারাবে, কখন সতেজ থাকবে, কখন বুড়ো হবে ইত্যাদি। সহজ করে বললে, কোষ যখন বুড়ো হয় তখন তার মধ্যে জিনের সেই সংকেতে কিছু বদল আসে। জিনের মধ্যে রাসায়নিক পরিবর্তনের কারণেই কোষ ধীরে ধীরে সতেজতা হারাতে থাকে। ফলে কোষ দিয়ে তৈরি কলার কার্যক্ষমতাও কমতে থাকে।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার জৌলুস হারায়। মানুষ বার্ধ্যকের দিকে এগিয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা গোড়ার এই বদলটাকেই থামিয়ে দিতে চাইছেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিএনএ-র মধ্যে যে সংকেতের বদল হয় তাকেই ফের অদলবদল করে পরীক্ষা করছেন বিজ্ঞানীরা।কালচক্রের গতিকে যদি উল্টে দিতে হয় তাহলে শরীরের কোষকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে তার আগের রূপে। এটা সম্ভব করতে পারবে ওই অ্যামাইনো অ্যাসিড, এমনটাই দাবি বিজ্ঞানীর। তবে পরীক্ষা এখনও চলছে। সবটাই গবেষণা স্তরে আছে।।