সাধারণত পুলিশ সাধারণ মানুষের রক্ষার জন্য থাকে, কিন্তু অনেক সময় পুলিশের হাত দিয়েও দু-একটা এমন কাজ হয়ে যায় যা সাধারণ মানুষের সম্মানের উপর আঘাত করে। আর সেরকমটাই একটি ঘটনা ঘটেছিল যেখানে এক খুবই দরিদ্র ব্যক্তি যিনি কখনো কুলির কাজ করেছেন আবার কখনো রিকশা চালিয়েছেন, সেই ব্যক্তিকে কোন একটি কারণে চড় মেরেছিল পুলিশ। আর এই ঘটনাটি তার ছেলের মনে ভীষণভাবে আঘাত করে। তিনি তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে এর একটা বিহিত করতেই হবে। আর তিনি যা করে দেখালেন তাতে স্যালুট জানাচ্ছে নেটিজেনরা।
কখনও কুলির কাজ করেছেন বাবা, কখনও সংসারের তাগিদে চালিয়েছেন রিক্সাও! কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিয়েছেন ছেলে কমলেশ কুমারকে। বিহারের সিরহানা জেলার কমলেশ চলতি বছর বিহার জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় ৬৪ তম স্থান অর্জন করে সকলকে তাক লাগিয়েছেন। রিক্সাচালকের ছেলে হয়েও কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের জেরে এই অসাধ্যকে সাধন করেছে কমলেশ।চাঁদনী চক এলাকায় এক পুলিশকর্মী্র সঙ্গে কমলেশের বাবার কথাও কাটাকাটি হয় একবার, পুলিশকর্মী সকলের সামনেই বাবাকে চড় মারেন। সঙ্গে ছিল সেদিনের ছোট কমলেশ।
সেই ঘটনার পরই বিচারক হওয়ার জেদ চাপে কমলেশের মনে। ভাবনা অনুযায়ী শুরু করেন কঠোর পরিশ্রম- অধ্যাবসায়। অবশেষে সাফল্য ছুঁয়ে স্বপ্ন সফল কমলেশের।জীবিকার সন্ধানে সপরিবারে দিল্লি চলে যান বাবা। তখন কমলেশ সবেমাত্র স্কুলে ভর্তি হয়েছে। সেই থেকে দিল্লিতেই বাস কমলেশের। লাল কেল্লার পিছনে একটি বস্তিতে পরিবারের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন তিনি। বস্তির ১০ বাই ১০ ঘরে থেকে চালিয়ে গিয়েছেন পড়াশুনা। কিন্তু তার এতটাই কপাল খারাপ ছিল যে কিছুদিনের মধ্যেই তাদেরকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় কারণ বস্তি ভেঙে ফেলা হচ্ছিল। নিজের মাথার উপর থাকা আস্তানাটি সে হারিয়ে ফেলে।
পরে উচ্ছেদের পর ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করেন কমলেশের পরিবার। শৈশবের দিনগুলোর কথা মনে করে এখনও চোখে কল আসে কমলেশের।দ্বাদশ পাশ করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন কমলেশ। ২০১৭ সালে, কমলেশ উত্তরপ্রদেশে এবং তারপরে বিহার জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় বসেন। অতিমারী পরিস্থিতিতে কমলেশের তিন বছর নষ্ট হলেও, চেষ্টায় কোন ছেদ পড়েনি কমলেশের। অবশেষে স্বপ্ন পূরণ! বিহার জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হতেই কমলেশ জানতে পারেন তিনি ৬৪ তম স্থান অর্জন করে পরীক্ষায় পাস করেছেন।
বাবাকে এই আনন্দ সংবাদ জানাতেই গর্বে বুক ভরে ওঠে তাঁর। আর ছেলের সাফল্যের এই কাহিনী এখন ভাইরাল নেটপাড়ায়। কমলেশ জানিয়েছেন যে যখন তিনি এই পরীক্ষায় পাশ করেন তখন তিনি তার বাবাকে যখন তিনি এই ব্যাপারটি জানান তখন তার বাবা দিল্লির রাস্তায় ছোলা ভাটুরা বিক্রি করছিলেন এবং ছেলের এই সাফল্যের কথা শুনে তার বাবা তৎক্ষণাৎ কেঁদে ফেলেন।