পেশায় স্কুল শিক্ষক স্বামী আগেই মারা গিয়েছেন। সম্বল বলতে বৃদ্ধার ছিল শুধু ভিটে-মাটিটুকু। কিন্তু তাও সহ্য হল না পুত্র-পুত্রবধূর। নিজের মা-কে ঘরছাড়া করতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠাবোধ হয়নি তাদের। শেষে ন্যায় বিচারের আশায় তেহট্ট আদালতের দ্বারস্থ হন বৃদ্ধা।বৃদ্ধার আইনজীবী গোবিন্দ বিশ্বাসের বয়ান অনুযায়ী, নদিয়ার বেতাই উত্তর জিতপুরের বাসিন্দা পুস্পরানি বালার তিন ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। ১৯৮৯ সালে তাঁর স্বামী আদিত্য বালা মারা যান। তিনি পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক ছিলেন। তারপর থেকে তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়েকে খুব কষ্ট করে মানুষ করেন পুস্পরানি। অথচ তার সাথেই অন্যায় করলো তারই ছেলে, আর তার বিরুদ্ধেই বড়ো আদেশ দিল আদালত।
আদালতের নির্দেশে একদিকে যেমন নিজের বাড়িতে ফিরলেন বৃদ্ধা। শুধু তাই নয়, ছেলে-বউ-নাতিদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করল পুলিশ। মে মাসের ১৮ তারিখ বিচারক নির্দেশ দিয়েছিলেন কুড়ি দিনের মধ্যে ওই বৃদ্ধা যাতে নিজের বাড়িতে বসবাস করার সুযোগ পান তা দেখতে হবে। কোর্টের সেই নির্দেশ মেনেই এ দিন বৃদ্ধা ফিরলেন নিজের বাড়িতে। অনেক কষ্ট করে বৃদ্ধা মেয়ের বিয়েও দেন। দুই ছেলে কাজের সুত্রে বাইরে থাকেন। তবে এক ছেলে বিদ্যুৎ বালা তাঁর পরিবার নিয়ে ওই বৃদ্ধার সঙ্গে থাকতেন।ওই বৃদ্ধার পাঁচ শতক জমির উপর টিনের বেড়া ও চালের বাড়ি ছিল। পরে ওই জায়গায় তিনটে পাকা ঘর ও পায়খানা বাথরুম করেন বৃদ্ধা। পুস্পরানির অভিযোগ তাঁকে মারধর করে পেনশনের টাকা কেড়ে নিত ওই ছেলে বউমা নাতিরা।
এর প্রতিবাদ করায় ওই বৃদ্ধাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তারা। বেশ কিছুদিন পথে পথে ঘুরে বেড়িয়ে চেয়ে চিন্তে খেয়ে শেষে মেয়ের কাছে আশ্রয় নেন তিনি।এরপর তেহট্ট আদালতে গিয়ে হারানো ভিটে-মাটির জন্য আবেদন করেন তিনি। সেই মতো আদালতে মামলা করা হয়। অবশেষে ১৮ মে বৃহস্পতিবার বিচারক নির্দেশ দেন ওই ঘরগুলি থেকে ছেলে বউমা নাতিদের বের করে দিয়ে সেই জায়গায় ওই বৃদ্ধাকে থাকতে দিতে হবে।
শুধু তাই নয়, আগামী কুড়ি দিনের মধ্যে পুলিশকে রিপোর্ট দিতে হবে আদালতে। সেই সঙ্গে ওই জায়গায় ওই ছেলে বা তাঁর কোনও আত্মীয় যাতে যেতে না পারে তার বন্দ্যোবস্ত করতে হবে।
আদালতের নির্দেশ খুশি পুস্পরানী বালা। তিনি বলেন, “অবশেষে আমি আমার স্বামীর ভিটেয় শেষ জীবনটা কাটাতে পারব। সেই সঙ্গে ছেলে বউমার অত্যাচার থেকে বাচলাম।”