অমিতাভের নায়িকা,একসঙ্গে ৪০টি ছবি সাইন করেও বলিউড থেকে কেন হারিয়ে যান পরভিন?জানলে অবাক হবেন!

বলিপাড়ায় তখন সত্তরের দশকের শুরু। পর্দা কাঁপাচ্ছেন রাজেশ খন্না। সবে উত্থান শুরু হয়েছে অমিতাভ বচ্চনের। এই দুই মহারথীর পাশাপাশি নায়িকাদের মধ্যে তখন ঝোড়ো ইনিংস শুরু করেছেন হেমা মালিনী, জিনাত আমনরা। সেই সময়ই আরব সাগরের তীরে তুফান তুলেছিলেন আরও এক নায়িকা। যাঁর গ্ল্যামারের ছটায় মোহিত হয়েছে তামাম সিনেদুনিয়া। কিন্তু কেরিয়ারের মধ্যগগনে থাকতে থাকতেই আচমকা উধাও হয়ে যান তিনি। তার পর এক দিন বাড়ির বন্ধ দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হয় তাঁর নিথর দেহ। বি টাউনের এক সময়ের সেই মোহময়ী নায়িকা পরভিন ববির জীবন এবং মৃত্যু— যে কাহিনি ঘিরে এখনও কৌতূহলের অন্ত নেই।

১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল গুজরাতের জুনাগড়ে জন্ম পরভিনের। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। পরভিনের যখন ৫ বছর বয়স, তখন বাবাকে হারান তিনি।সাল ১৯৭২। সেই সময় মডেল হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেন পরভিন। মডেলিং করতে করতেই রুপোলি পর্দায় নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। ১৯৭৩ সালে ‘চরিত্র’ সিনেমার হাত ধরে বলিউডে হাতেখড়ি হয় পরভিনের। তবে জীবনের প্রথম ছবি ফ্লপ হয় তাঁর। তবে পরভিনের উপস্থিতি নজর কাড়ে।১৯৭৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘দিওয়ার’। অমিতাভ বচ্চন, শশী কপূরের সঙ্গে এই ছবিতে দেখা গিয়েছিল পরভিনকে। এই ছবির হাত ধরেই বলিপাড়ার প্রথম সারির নায়িকা হিসাবে নিজের জায়গা করে নেন পরভিন।‘দিওয়ার’ ছবির সাফল্যের পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।একের পর এক সুপারহিট ছবির নায়িকা হিসাবে দেখা যায় তাঁকে।অমিতাভের সঙ্গে পরভিনের জুটি সেই সময় আলাদা করে নজর কেড়েছিল। তাঁরা একসঙ্গে মোট ৮টি ছবি করেছেন। সব ছবিগুলিই বক্স অফিসে সফল হয়েছে।

```

পরভিনের হাতে তখন একের পর এক সুপারহিট ছবি। সাফল্য তখন তাঁর হাতের মুঠোয়। এই সময়ই প্রেমের জোয়ারে গা ভাসিয়েছিলেন এই লাস্যময়ী নায়িকা।শোনা যায়, বলিপাড়ায় প্রথমে ড্যানি ডেনজংপার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন পরভিন। তবে কখনই এই সম্পর্ক নিয়ে মুখ খোলেননি ড্যানি। ড্যানির পর অভিনেতা কবীর বেদীর প্রেমে পড়েছিলেন পরভিন। তবে সেই প্রেমও টেকেনি। এরপর পরিচালক মহেশ ভট্ট। মহেশ এবং পরভিনের প্রেমকাহিনি বলিপাড়ার অন্যতম চর্চিত বিষয়। পরভিনের মৃত্যুর দিন পর্যন্ত এই প্রেম ঘিরে চর্চা চলেছিল।পরভিনের প্রেমে পড়েছিলেন বিবাহিত মহেশ। তাই তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে সেই সময় বিশেষ চর্চা হয়েছিল। বলিপাড়ায় তখন সুপারস্টার নায়িকা পরভিন। সেই সময় স্ত্রীকে ছেড়ে পরভিনের সঙ্গে একত্রবাস শুরু করেছিলেন মহেশ।যত দিন গড়িয়েছে, ততই উথালপাথাল হয়েছে তাঁদের প্রেমপর্ব।সাল ১৯৭৯। ঘরে ঢুকে পরভিনকে দেখে চমকে গিয়েছিলেন মহেশ। ঘরের কোণে ভয়ে কুঁকড়ে বসে রয়েছেন পরভিন। তাঁর হাতে ছুরি। মহেশকে দেশে ইশারায় পরভিন বোঝান চুপ থাকতে। কারণ ঘরে নাকি অন্য কেউ রয়েছেন, যিনি পরভিনকে হত্যা করবেন।

পরভিনের এ হেন অবতার দেখে কিছুটা ঘাবড়েই গিয়েছিলেন মহেশ। সেই প্রথমবার মহেশ টের পান যে পরভিনের কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। তার পর থেকে একাধিকবার এমন লক্ষ্মণ নাকি দেখা গিয়েছিল পরভিনের। পরে জানা যায়, স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত পরভিন।এই সময় পরভিনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর দুই প্রাক্তন প্রেমিক ড্যানি এবং কবীর। পরভিনকে আমেরিকায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার জন্য মহেশকে সেই সময় পরামর্শ দিয়েছিলেন কবীর।শোনা যায়, সেই সময় নাকি নানা রকম আতঙ্কে ভুগতেন পরভিন। কখনও বলতেন, গাড়িতে বোমা রাখা রয়েছে। আবার কখনও বলতেন, তাঁকে কেউ খুনের চেষ্টা করছেন।এমন সময় আরও একটি খবর ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। অমিতাভ বচ্চন নাকি তাঁকে মারতে চেয়েছিলেন, এমনটাই ভেবেছিলেন পরভিন। বলিপাড়ার সুপারস্টার নায়িকার এমন অনেক কথা ঘিরে তখন হুলস্থুল কাণ্ড।পরভিনকে সুস্থ করতে মরিয়া ছিলেন মহেশ। একাধিক মনোরোগ বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হন তিনি। তবে তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। এই অসুস্থতার জন্য কেরিয়ারের মধ্যগগনে থেকেও ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকেন পরভিন। শোনা যায়, পরভিনকে সুস্থ করতে ‘ইলেক্ট্রিক শক থেরাপি’ প্রয়োগের কথা বলা হয়েছিল, তবে তাতে রাজি হননি মহেশ।

```

পরভিনকে সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছিল মহেশকে। এতটাই সন্দেহপ্রবণ হয়েছিলেন পরভিন, যে তাঁকে খাবার দেওয়া হলে, তা আগে জোর করে মহেশকে খাওয়াতেন। যাচাই করে দেখতেন, সেই খাবারে কিছু মেশানো রয়েছে কি না। ভালবাসার জন্য মহেশও তাঁর কথা মেনে চলতেন। ওষুধও ঠিক মতো খেতে চাইতেন না পরভিন।এর পর ‘অর্থ’ ছবির কাজ শুরু করেন মহেশ। যা তাঁর এবং পরভিনের সম্পর্কের আধারে তৈরি। বেঙ্গালুরু থেকে মহেশের মুম্বই ফেরার কিছু দিনের মধ্যেই চলে আসেন পরভিন। তার পরই তাঁদের সম্পর্কের ভাঙন ঘটে।এর পর পরভিনকে নিয়ে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন মহেশ। সেখানে ছিলেন তাঁর দার্শনিক বন্ধু ইউজি কৃষ্ণমূর্তি। ভেবেছিলেন, সেখানে গিয়ে হয়তো মানসিক ভাবে কিছুটা ভাল থাকবেন পরভিন। এর পর পরভিনকে বন্ধুর দায়িত্বে রেখে কয়েক মাস পর মুম্বই ফিরে যান মহেশ।১৯৮৩ সালের পর থেকে সিনে দুনিয়ায় আর সে ভাবে দেখা যায়নি পরভিনকে। ২০০২ সালে আবার খবরের শিরোনামে ফিরেছিলেন পরভিন। ১৯৯৩ সালে মুম্বইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের মামলার শুনানিতে বিশেষ আদালতে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন তিনি। দাবি করেছিলেন, এই মামলায় অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করেছেন তিনি। তবে আদালত যখন তাঁকে তলব করে, তার পর আর সাড়া দেননি তিনি। পরভিন আশঙ্কা করেন যে, তাঁকে খুন করা হতে পারে।এর ৩ বছর পর ২০০৫ সালের ২২ জানুয়ারি মুম্বইয়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় পরভিনের দেহ। নায়িকার বাড়ির দরজায় ৩ দিন ধরে পড়েছিল খবরের কাগজ। আর এতেই সন্দেহ হয়। পরে পুলিশ এসে তাঁর দেহ উদ্ধার করে।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে, দেহ উদ্ধারের ৩ দিন আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। পরভিনের মৃত্যু অসুস্থতার কারণে এবং অস্বাভাবিকতা নেই বলে দাবি করে পুলিশ। পরভিনের শেষকৃত্যের জন্য তাঁর স্বজনরা এগিয়ে না এলে তিনি নিজেই তা করতেন বলে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন মহেশ। জুহুতে পরভিনকে সমাধিস্থ করেন তাঁর পরিজনরাই। পরভিনের মৃত্যুর পর তাঁর জীবন নিয়ে আরও একটি ছবি বানান মহেশ। এই ছবিটি প্রযোজনাও করেছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে মুক্তি পায় সেই ছবি। যার নাম ‘ও লমহে’। পরভিনের সঙ্গে সম্পর্কে ভাঙনের পরও তাঁকে ভুলতে পারেননি মহেশ। তাঁদের সেই প্রেমকাহিনি এখনও ভুলতে পারেনি বি-টাউন। সেই সঙ্গে ভোলা যায়নি পরভিনকেও।