গ্যারেজে বসে পাঁচ বন্ধুর সাথে তিনি তৈরি করতেন ক্যালকুলেটর। সেই ব্যক্তি ওই ছোট্ট অবস্থা থেকে আজকে যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছেন তাকে শুধু কোটিপতি বলা একদমই ভুল হবে। বর্তমানে তার নেট ওয়র্থ তিন হাজার কোটি ডলার। তিন হাজার কোটি টাকা নয়, তিন হাজার কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যদি এটাকে কনভার্ট করা হয় তাহলে পুরো টাকাটা দাঁড়ায় প্রায় ২ লক্ষ ৪৩ হাজার কোটি টাকা তে। যা রীতিমতো অবাক করার মত। যদিও এক্ষেত্রে এটাও বলতে হয় যে গৌতম আদানির টাকা এই ব্যক্তির থেকে প্রায় ডবল এবং মুকেশ আম্বানির টাকা এর থেকেও প্রায় তিন গুণ। এই ব্যক্তি বাকি সবার থেকে আলাদা কেন এবং কিভাবে তিনি এই বিশাল সম্পত্তির মালিক হলেন।
সবার প্রথমে জানিয়ে রাখি যে এই ব্যক্তি একজন বিশাল বড় দানবীর এবং তিনি যত টাকা ইনকাম করেন তার একটা বড় অংশ তিনি দান করে দেন গরিবদের জন্য। বলা হয় দান করা একটি পুণ্যের কাজ এবং আমাদের দেশে দাতার অভাব নেই। ভারতে এই প্রথা আজ থেকে নয়, বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে। আমাদের দেশে অনেক বড় শিল্পপতি আছেন। তাদের মধ্যে কিছু শিল্পপতি যারা সমাজের কল্যাণে দান করতে সদা প্রস্তুত। জামসেটজি টাটা, যিনি টাটা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, তাকে শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজসেবী বলা হয়। তিনি তাঁর জীবনের অর্জিত অর্থের বেশিরভাগই সমাজের কল্যাণে ব্যবহার করেছিলেন। রতন টাটা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন। তিনি তার উপার্জনের বেশিরভাগ অর্থ সমাজকল্যাণে দান করেছেন।আজ আমরা এমন একজন শিল্পপতির কথা বলব, যিনি সমাজকল্যাণে প্রতিদিন ৩ কোটি টাকা দান করেছেন। তাকে বলা হয় ভারতের সবচেয়ে বড় সমাজসেবী।
তামিলনাড়ুর একটি ছোট্ট গ্রামে জন্ম হয় শিবের, সেখানে একটি স্কুল থেকে তিনি পড়াশোনা কমপ্লিট করেন এবং মাদুরায়ের একটি কলেজে তিনি ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপরে তিনি একটি কলেজে ইলেকট্রনিক্স এবং ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন এবং তারপরে একটি কোম্পানিতে যোগদান করেন ক্যালকুলেটর বানানোর জন্য। সেখানে তিনি দেখেন তার মতই বেশ কিছু ব্যক্তি রয়েছে যারা খুব সাধারণ নটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত চাকরি করতে চাইছে না এবং এর বাইরে কিছু করতে চাইছে। এই কয়েকজন মিলে একটি দল তারা তৈরি করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন যে তারা একটি কোম্পানি তৈরি করবেন। কিন্তু সেই কোম্পানিতে তারা কি প্রোডাক্ট তৈরি করবেন? শিব বলেন যে এই কোম্পানিতে তারা নতুন কম্পিউটার তৈরি করবেন। এটা একটা অবাস্তব কথা ছিল তার কারণ যে মুহূর্তে শিব এই কথাটা বলেছিল যে তারা কম্পিউটার তৈরি করবে সেই মুহূর্তে সারা ভারতে মাত্র ২৫০টি কম্পিউটার ছিল। অর্থাৎ ভাবলে অবাক লাগবে যে তার দূরদৃষ্টি ঠিক কতটা ছিল যেটা থেকে তিনি বুঝতে পেরে গেছিলেন যে ভবিষ্যতে কম্পিউটার কতটা জরুরি হতে চলেছে।
যদিও তার কাছে খুব বেশি টাকা ছিল না তার সত্ত্বেও তিনি একটি কোম্পানি তৈরি করেন যার নাম দেন মাইক্রোকম, সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল তবে সেই সময় সরকার হঠাৎ করে পদক্ষেপ নিতে শুরু করে যে কিভাবে ভারতের কম্পিউটার জাতীয় জিনিস তৈরি করা যাবে এবং দেশের উন্নতি করা যাবে, সেই মুহূর্তে উত্তর প্রদেশ সরকারের সাথে দেখা করে, সরকারের সাথে পার্টনারশিপ করে তিনি একটি কোম্পানি তৈরি করেন ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা খরচা করে, অথচ মাত্র এক বছরের মধ্যেই তাদের লাভ হয়ে যায় প্রায় ১০ লাখ টাকা। ধীরে ধীরে তাদের লাভের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং লাখ থেকে কোটি সেখান থেকে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ কোটিতে চলে আসে তাদের মোট লাভ। এই কোম্পানির নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন, এর নাম HCL, এটি ভারতের অন্যতম বড় একটি টেক কোম্পানি, শুধু ভারতে নয় বিশ্বের ১৪০ টি দেশে তারা কাজ করে।
তিনি জীবনে অভাব অনটন সবকিছু দেখেছিলেন যার জন্য গরিবদের সবসময় তিনি দান করে থাকেন। গত এক বছরের সবথেকে বড় দানবীরদের লিস্ট যদি দেখা হয় ভারতে সেক্ষেত্রে এই দানশীল ব্যক্তির তালিকায় প্রথম নামটি হল গৌতম আদানি বা মুকেশ আম্বানির নয়, এই দুজনের কেউই প্রথম স্থানে নেই, এর প্রথম স্থানে আছেন শিব নাদার। এই দাতাদের তালিকায় ভারত থেকে প্রথম ব্যক্তি হলেন HCL টেকনোলজিসের প্রতিষ্ঠাতা শিব নাদার । তিনি এক বছরের মধ্যে প্রায় 1,161 কোটি টাকা দান করেছেন। হিসেব করলে গড়ে প্রতিদিন ৩ কোটি টাকা অনুদান হয়েছে। ইন্ডিয়া মোস্ট জেনারাস খেতাব পেয়েছেন তিনি। ভারতের এমন একজন মানবহিতৈষী ও সমাজকল্যাণ কর্মীকে আমরা প্রণাম জানাই ।
যিনি নিজের চেয়েও মানুষের কথা ভেবেছেন, মানুষের সমস্যা বুঝেছেন।ভারতের এই সমাজসেবীদের তালিকায় আরও অনেক লোক রয়েছে, তাদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন উইপ্রোর আজিম প্রেমজি । তিনি 1 বছরে 484 কোটি টাকা দান করেছেন। আজিম প্রেমজি, 77 বছর বয়সী, দাতাদের তালিকায় অন্যতম সেরা দাতা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। দাতাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আরও কয়েকজনযদি আমরা রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানির কথা বলি , তাহলে তিনি দাতাদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।তিনি 411 কোটি টাকা দান করেছেন।